বইয়ের বাজারে অনুবাদের নামে নৈরাজ্য

  • কপিরাইট বা মেধাস্বত্ব নিয়ে কথা উঠলে এ দেশের অধিকাংশ অনুবাদক ও প্রকাশক অস্বস্তিতে ভুগবেন। কারণ, বাংলাদেশে মূল গ্রন্থের লেখক বা প্রকাশকের কাছ থেকে মেধাস্বত্ব বা কপিরাইট নেওয়ার উদাহরণ খুবই কম।

  • দেশে বিশ্বসাহিত্যের অগণিত পাঠকের মতো নিবেদিতপ্রাণ অনুবাদকও আছেন। মূল সাহিত্যের প্রতি বিশ্বস্ত থেকে গভীর নিষ্ঠা ও শ্রমে অনুবাদের মাধ্যমে পৃথিবীর নানা প্রান্তে থাকা লেখকদের রচনার সঙ্গে এ দেশের পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রয়াস চলছে দীর্ঘদিন ধরে।

প্রতীকী ছবি

নোবেল বিজয়ী বিশ্ববরেণ্য কথাশিল্পী গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের গল্পসমগ্র বাংলা অনুবাদে বেরিয়েছে ঢাকার শামস প্রকাশনী থেকে। প্রচ্ছদে সম্পাদক হিসেবে ছাপা হয়েছে জনৈক পি এম রাসেলের নাম। তিনিই যদি সম্পাদক, স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, গল্পগুলোর অনুবাদক কে? ভূমিকা পড়ে রহস্যের সুরাহা হলো। ২০০৬ সালে কলকাতার দে’জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত অমিতাভ রায় অনূদিত মার্কেসের গল্পসমগ্র–এর হুবহু অনুবাদটি পি এম রাসেলের নামে ছেপে বাজারে ছেড়েছে শামস প্রকাশনী। অমিতাভ রায় অনূদিত বইয়ের ভূমিকা লিখেছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। ঠিক সেই ভূমিকাই ছাপা হয়েছে পি এম রাসেলের নামে।

তরুণ লেখক স্বকৃত নোমান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, কলকাতার মুশায়েরা থেকে প্রকাশিত অংকুর সাহা ও শৈবাল কুমার নন্দ সম্পাদিত কার্লোস ফুয়েন্তেসের গল্পসমগ্রও পি এম রাসেলের নামে শামস প্রকাশনী ছেপেছে।

বই বিক্রির একটি সাইটে গিয়ে দেখা গেল, বিশ্বখ্যাত লেখকদের ডজনখানেক বইয়ে অনুবাদক হিসেবে তাঁর নাম আছে। বইগুলোর মধ্যে আছে এইচ জি ওয়েলসের শ্রেষ্ঠ গল্প, দ্য আইল্যান্ড অব ড. মোবো, দ্য ইনভিজিবল ম্যান, দ্য ওয়ার অব দ্য ওয়ার্ল্ড, দ্য টাইম মেশিন প্রভৃতি।

কে এই পি এম রাসেল? বইয়ের ফ্ল্যাপে তরুণ বয়সী স্যুট–টাই পরা একজনের ছবি। ভুল গদ্যে ভরা ছোট পরিচিতিতে তাঁর জন্ম, কর্ম বা শিক্ষাগত যোগ্যতার উল্লেখ নেই। এই ব্যক্তি যে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ লেখকদের গ্রন্থের অনুবাদ করার যোগ্য নন, সন্দেহের অবকাশ থাকে না। শামস প্রকাশনীর বইয়ের একমাত্র পরিবেশক হিসেবে নাম আছে পার্ল পাবলিকেশন্সের। পার্লের পরিচালক হাসান জায়েদীর সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, তাঁর প্রয়াত মামা ব্যবসাটি চালাতেন। তাই এসব অপকর্মের বিষয়ে তিনি জানতেন না। পরে জানতে পেরে বইগুলো বাজার থেকে তুলে নিয়েছেন। একটি সাইটে এখনো বইগুলো বিক্রি হচ্ছে শুনে জায়েদী বললেন, তাঁর জানা ছিল না। আজই (১৪ সেপ্টেম্বর) তিনি বইগুলোর বিক্রি বন্ধ করতে বলবেন।

তিনি কিন্তু একা নন

বাংলাদেশের বইয়ের বাজারে বিশ্ববরেণ্য লেখকদের যত অনুবাদ বই আছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এর এক বিরাট অংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে অনূদিত বইয়ের হুবহু অনুকরণ। শুধু প্রচ্ছদ আর অনুবাদকের নাম পাল্টে দেওয়ার কর্মটি সম্পাদন করেন তথাকথিত অনুবাদক, সম্পাদক ও তাঁদের প্রকাশকেরা।

এই অনুবাদকেরা সবাই পি এম রাসেলের মতো অজ্ঞাতকুলশীলও নন। যেমন জুলফিকার নিউটন নামের একজন একসময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) নির্বাচিত সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন। ‘সাহিত্যসাধনা’ শুরু করেছিলেন কবি হিসেবে। ছাত্র থাকাকালে প্রকাশিত হয়েছিল প্রথম কাব্যগ্রন্থ হারানো অর্কিড। সে কাব্যগ্রন্থে প্রেমেন্দ্র মিত্র, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, দীনেশ দাশ, শক্তি চট্টোপাধ্যায়সহ বাংলা ভাষায় শ্রেষ্ঠ কবিদের চেনা কবিতাগুলো নিজের নামে ছেপেছিলেন জুলফিকার। বাংলা সাহিত্যে চৌর্যবৃত্তি অদ্বিতীয় নিদর্শন হয়ে থাকবে এই গ্রন্থ। সে বইয়ে দীনেশ দাশের বিখ্যাত ‘কাস্তে’ কবিতাটি নতুন করে পড়ার অদ্বিতীয় অভিজ্ঞতা এই প্রতিবেদকের মনে জ্বলজ্বল করছে।

জুলফিকার নিউটন অনুবাদে লিপ্ত হয়েও বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছেন। মার্কেসের শ্রেষ্ঠ গল্প, হানড্রেড ইয়ারস অব সলিচিউড, কাফকার শ্রেষ্ঠ গল্প, বরিস পাস্তেরনাকের ডক্টর জিভাগো, আলবেয়ার কামুর দ্য প্লেগ, গুস্তাভ ফ্লোবেয়ারের মাদাম বোভারি, হেরমান মেলভিলের মবিডিক, স্তাঁদালের দ্য রেড অ্যান্ড দ্য ব্ল্যাক প্রভৃতি বহু বই তিনি এমন অনুবাদ করেছেন অবিশ্বাস্য দ্রুততায়। তাঁর নামে ছাপানো ১০৯টি বইয়ের মধ্যে অন্তত ৬০টি বইয়ের তালিকা রকমারি ডট কমে প্রচ্ছদসহ আছে।

২০০৮ সালে অনন্যা থেকে জুলফিকার নিউটনের শিল্পের নন্দনতত্ত্ব নামে একটি বই প্রকাশের পর তরুণ শিল্পসমালোচক ও গবেষক রেজাউল করিম মুক্তাঙ্গন ব্লগে তথ্যপ্রমাণ দিয়ে দেখিয়েছিলেন, সেটি দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের রূপ, রস, সুন্দর ও নন্দনতত্ত্বের ভূমিকা বইটির নকল। এ বইয়েও চাতুর্যের সঙ্গে প্রবন্ধগুলোর শিরোনাম পাল্টে দেওয়া হয়েছে। এদেশীয় পাঠকের কথা বিবেচনা করে জুলফিকার নিউটন যে দু–একটি পরিবর্তন করেছেন, সে জন্য তাঁর বুদ্ধির তারিফ করে রেজাউল করিম লিখেছেন, ‘তারাশঙ্করের লেখায় বীরভূমের ভূগোল এবং বিভূতিভূষণের লেখায় গ্রামবাংলার উদ্ভিদের নির্ভুল পরিচয় পাই পাল্টে দিয়ে তিনি লিখেছেন, সৈয়দ শামসুল হকের লেখায় রংপুরের ভূগোল এবং জসীমউদ্‌দীনের লেখায় গ্রামবাংলার নির্ভুল পরিচয় পাই।’

হেরমান মেলভিলের চিরায়ত উপন্যাস মবিডিক অনুবাদ করেছিলেন গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্য। প্রথম মুদ্রণ ছাপা হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। চার দশক পর জুলফিকার নিউটন নিজের নামে সেটি চালিয়ে দিয়েছেন কিছু শব্দ পাল্টে দিয়ে। স্তাঁদালের উপন্যাস দ্য রেড অ্যান্ড দ্য ব্ল্যাক মূল ফরাসি থেকেই অনুবাদ করেছিলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পূর্ণিমা রায়। সেটিও আত্মসাৎ করেছেন নিউটন।

জুলফিকার নিউটন বইয়ের ফ্ল্যাপে নিজের যে পরিচিতি ছেপেছেন, তা–ও অসংগতিতে ভরা। সেখানে লেখা আছে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে ‘কৃতিত্বের সঙ্গে দর্শন ও নাট্যকলা বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণির সঙ্গে অনার্সসহ এমএ ডিগ্রি এবং পরবর্তী সময়ে শান্তিনিকেতন থেকে “রবীন্দ্রনাথের সৌন্দর্য দর্শন”–এর ওপর উচ্চতর গবেষণা সম্পন্ন করেন।’ অথচ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন ও নাট্যকলা বিভাগ নামে কোনো বিভাগ নেই। দর্শন ও নাট্যকলা নামে পৃথক দুটি বিভাগ আছে, তবে একজনের পক্ষে দুটি বিভাগ থেকে অনার্স ও এমএ ডিগ্রি করার বিধান নেই। শান্তিনিকেতন থেকে গবেষণার জন্য আদৌ কি ডিগ্রি বা সনদ পেয়েছেন, তারও উল্লেখ নেই। পরিচিতিপর্বে বেশ কিছু সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্তির কথা আছে। তার সত্যতা যাচাইয়ের উপায় নেই। তবে সাঁকো নামে একটি সাহিত্যপত্র তাঁকে পুরস্কার দিয়েছিল। সেই পত্রিকাতেই জুলফিকার নিউটন নিজের নামে ছেপেছিলেন মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় অনূদিত মার্কেসের নভেলা নোবডি রাইটস টু দ্য কলোনেল

জুলফিকার নিউটনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ‘অসাধু’ প্রকাশকদের দায়ী করেন। তিনি বলেন, অন্তত ১০টি বই তাঁর নামে বাজারে আছে, যেগুলো তাঁর অনুবাদ নয়। কিন্তু ১০টি বই ছাড়া আরও যে ৫০টি বই তাঁর নামে আছে, সে সম্পর্কে জানতে চাইলে নিউটন অসংলগ্ন উত্তর দেন। তিনি বারবার বলতে থাকেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী একমাত্র সন্তানকে নিয়ে তিনি এখন বিপর্যস্ত। ১০ বছর ধরে তিনি আর এসব কাজ করেন না। পাঠকেরা তাঁর নামে বই কিনে প্রতারিত বোধ করে থাকলে তিনি দুঃখিত, অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মনজুর রহমানের বিরুদ্ধেও উঠেছে অন্যের অনুবাদ নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ। এই অধ্যাপকের নামে আছে শেক্সপিয়ার রচনাসমগ্র, জুলভার্ন রচনাসমগ্র, শার্লক হোমস রচনাসমগ্র, ডেল কার্নেগি রচনাসমগ্র, আগাথা ক্রিস্টির চারটি উপন্যাস, গোর্কির মা, তলস্তয়ের ওয়ার অ্যান্ড পিস প্রভৃতি। একজনের পক্ষে এত বিপুলাকার গ্রন্থ কীভাবে অনুবাদ করা সম্ভব? লেখক ও অনুবাদক মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘অসম্ভব। এই বিশ্ববরেণ্য লেখকদের শুধু একজনের রচনাসমগ্র অনুবাদের পেছনেই এক অনুবাদকের পুরো জীবন ব্যয় হয়ে যাবে।’

তরুণ লেখক মোজাফফর হোসেন ফেসবুকে মনজুর রহমানের তস্করবৃত্তির প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন। ১৯৬০ সালে কলকাতার তুলি ও কলম থেকে প্রকাশিত মণীন্দ্র দত্ত অনূদিত তলস্তয়ের সংগ্রাম ও শান্তি (ওয়ার অ্যান্ড পিস) বইটি কিছুমাত্র পরিবর্তন না করেই কীভাবে মনজুর রহমানের নামে ২০১৮ সালে প্রকাশ পেল, সে প্রশ্ন তুলেছেন মোজাফফর হোসেন।

এ প্রসঙ্গে ফোনালাপে মনজুর রহমান জানান, তিনি প্রতারণার শিকার। কয়েক বছর আগে সৃজনী প্রকাশনীর মশিউর রহমান তাঁকে বিশ্বের খ্যাতিমান কয়েকজন লেখকের রচনার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে লিখে দিতে বললে তিনি ‘সরল বিশ্বাসে’ তা লিখে দেন। রচনাসমগ্র–এর ভূমিকা হিসেবে যে তাঁর লেখা যাবে এবং অনুবাদক হিসেবে নাম ছাপা হবে, তা তিনি জানতেন না বলে দাবি করেন। ইতিমধ্যে তিনি প্রকাশকের বিরুদ্ধে মামলা করে জয় লাভ করেছেন বলেও জানান। ঝিনাইদহ সহকারী জজ আদালতের রায়ের কপি আগামী মাসে পাওয়া যাবে বলে জানিয়ে তিনি আপাতত উকিল নোটিশের উত্তরে দোষ স্বীকার করে প্রকাশকের দেওয়া চিঠির অনুলিপি এই প্রতিবেদকের কাছে পাঠিয়েছেন। প্রশ্ন তবু থেকে যায়, ফেসবুকে হইচই হওয়ার আগে তিনি নীরব ছিলেন কেন?

মেধাস্বত্ব জটিলতা

দেশে বিশ্বসাহিত্যের অগণিত পাঠকের মতো নিবেদিতপ্রাণ অনুবাদকও আছেন। মূল সাহিত্যের প্রতি বিশ্বস্ত থেকে গভীর নিষ্ঠা ও শ্রমে অনুবাদের মাধ্যমে পৃথিবীর নানা প্রান্তে থাকা লেখকদের রচনার সঙ্গে এ দেশের পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রয়াস চলছে দীর্ঘদিন ধরে। কবীর চৌধুরী, হায়াৎ মামুদ, খালিকুজ্জামান ইলিয়াস, আবদুস সেলিম, জাফর আলম, আলী আহমদ, আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া, ফারুক মঈনউদ্দীন, আলম খোরশেদ, রাজু আলাউদ্দিন, জি এইচ হাবীব, মাসরুর আরেফিন, শিবব্রত বর্মন, রফিক–উম–মুনীর চৌধুরী, শওকত হোসেন, জাভেদ হুসেন, অদিতি ফাল্গুনী, আফসানা বেগম, বিপাশা মণ্ডল, অনীশ দাশ অপুসহ অনেকেই বাংলা ভাষার পাঠকদের কাছে বিশ্বসাহিত্য পৌঁছে দিচ্ছেন। গুটিকয় অসাধু ব্যবসায়ী ও চতুর ব্যক্তি এ উদ্যোগে কালিমা লেপন করছেন।

বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নির্বাহী পরিচালক মো. মনিরুল হক বলেন, ‘প্রকাশকের সবাই সাহিত্যবোদ্ধা নন। তাই অনেক সময় লেখক-অনুবাদক নামধারী অনেকে প্রতারণা করেন। আমাদের পাঠকেরা বাংলা ভাষায় বিশ্বসাহিত্য পড়তে চান। সেদিকে প্রকৃত লেখক-অনুবাদকদের নজর দেওয়া উচিত।’ নকল অনুবাদগ্রন্থের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ জানালে সমিতির পক্ষ থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে উল্লেখ করে এ ব্যাপারে কপিরাইট অফিসও ভূমিকা রাখতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

কপিরাইট বা মেধাস্বত্ব নিয়ে কথা উঠলে এ দেশের অধিকাংশ অনুবাদক ও প্রকাশক অস্বস্তিতে ভুগবেন। কারণ, বাংলাদেশে মূল গ্রন্থের লেখক বা প্রকাশকের কাছ থেকে মেধাস্বত্ব বা কপিরাইট নেওয়ার উদাহরণ খুবই কম। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অনুবাদক জি এইচ হাবীব বলেন, কয়েকটি কারণে এ দেশের প্রকাশকেরা কপিরাইট বা মেধাস্বত্ব সংগ্রহ করতে পারেন না। প্রথমত, যোগাযোগের সমস্যা। দ্বিতীয়ত, বিদেশি প্রকাশকদের অনাগ্রহ এবং সর্বোপরি মেধাস্বত্বের উচ্চমূল্য। বিদেশি নামকরা প্রকাশকের কাছ থেকে একটি বইয়ের মেধাস্বত্ব কিনতে যে টাকা ব্যয় হবে, বাংলাদেশের ক্ষুদ্র বইয়ের বাজারে বই বিক্রি করে তা তুলে আনা অসম্ভব। সরকার যদি মেধাস্বত্ব–সংবলিত বই কেনার বিশেষ ব্যবস্থা নেয়, তাহলে অনুবাদক বা প্রকাশকেরা ওই পদ্ধতি অনুসরণ করবেন।

বাংলাদেশ কপিরাইট কার্যালয়ের রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী বলেন, প্রতিবেশী দেশের বাংলায় অনূদিত বই কেউ নকল করলে সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ব্যাপারে কেউ কপিরাইট টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করলে তাঁকে শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব। তা ছাড়া গ্রন্থের মূল লেখক বা প্রকাশকের কাছ থেকে অনুবাদের অনুমতি নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কপিরাইট অফিস মধ্যস্থতা করতে পারে বলেও জানান তিনি।