পুরান ঢাকার বংশালে গতকাল বুধবার এক নারীকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। তাঁর নাম আসমা আক্তার (৫৫)।
পুলিশ ও আসমা আক্তারের স্বজনদের দাবি, ছয় লাখ টাকা না দেওয়ায় আকবর হোসেন তাঁর বড় বোন আসমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বাসরোধে হত্যা করেন।
স্বজনেরা জানান, বংশালের ৪৬, বাগদাস লেনে আসমা নিজ বাড়ির দ্বিতীয় তলায় স্বামী মুরগি ব্যবসায়ী হাজি মো. জাহাঙ্গীর ও গৃহকর্মী মাহি আক্তারকে নিয়ে থাকতেন। তাঁদের দুই ছেলে বাপ্পী হোসেন ও ফয়সাল আহমেদ ওরফে সুমন তিনতলায় ও বড় ছেলে খোকন মিয়া থাকেন নিচতলায়। তবে সুমনের ছেলে রাব্বি হোসেন (১৪) তার দাদা-দাদির কাছে ঘুমাত।
পুলিশ ও স্বজনেরা জানিয়েছেন, গতকাল সকাল নয়টার দিকে আকবরসহ তিনজন দ্বিতীয় তলায় আসমার বাসায় যান। একপর্যায়ে আকবর আসমার শোয়ার ঘরে ঢোকেন। এ সময় আসমা ঘুমাচ্ছিলেন। তাঁর পাশে নাতি রাব্বি হোসেন জেগে ছিল।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রাব্বি হোসেন প্রথম আলোকে জানায়, আকবর তার ঘুমন্ত দাদিকে (আসমা) রুমাল দিয়ে নাক-মুখ চেপে ধরেন। তাকে ধমক দিয়ে খাটের ওপর চোখ বুজে থাকতে বলেন আকবর। আকবরের সঙ্গে আসা দুই ব্যক্তির একজন গৃহকর্মী মাহিয়াকে মারধর করে পাশের একটি কক্ষে নিয়ে মুখ চেপে ধরেন। তার দাদি জেগে ওঠার চেষ্টা করলে তাঁকে বালিশচাপা দেওয়া হয়। এ সময় তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়লে আকবর তাঁর দুই সহযোগীকে নিয়ে পালিয়ে যান। এরপর সে তার মা-বাবা ও নিচতলায় তার বড় চাচাকে গিয়ে এ খবর জানায়। ঘটনার সময় তার দাদা দোকানে ছিলেন।
পরে আসমার নিথর দেহ তাঁর সন্তানেরা সকাল ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আসমার ছেলে বাপ্পী হোসেন বলেন, ঘটনার সময় ঘুমিয়ে থাকায় তাঁরা কিছু টের পাননি। তাঁর বাবাও ছিলেন বাসার বাইরে। তিনি বলেন, আড়াই মাস আগে আকবর মামা তাঁর মায়ের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা ধার নেন। মা টাকা চাইতে গেলে ‘দিব’, ‘দিচ্ছি’ বলে টালবাহানা করতেন তিনি। এ নিয়ে তাঁর মায়ের সঙ্গে ঝগড়াও হয়েছিল। মাস খানেক আগে আকবর ১৫ লাখ টাকা পরিশোধ না করে উল্টো তাঁর মায়ের কাছে ছয় লাখ টাকা আবার ধার চান। তা দিতে অস্বীকার করায় আকবর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। বাসা থেকে চলে যাওয়ার সময় আকবর বলতে থাকেন, ‘এই বোন আমাদের হাতে খুন হবে। কেউ রক্ষা করতে পারবে না।’ তখন তাঁরা বিষয়টি গুরুত্ব দেননি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল সন্ধ্যায় আসমার লাশ আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
যোগাযোগ করা হলে বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, লেনদেন ও সম্পত্তির বিরোধ নিয়ে আলী আকবর তাঁর সহযোগীদের নিয়ে আসমাকে খুন করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় আকবরকে আসামি করে হত্যা মামলা হয়েছে। আকবরের বাসা ৪৩ বাগদাস লেনে। ঘটনার পর বাসায় তালা মেরে তিনি সপরিবারে পালিয়েছেন।