অনুমতি না নিয়ে রাসায়নিক পণ্য গুদামজাত করার মামলায় গ্রেপ্তার রাসায়নিক (কেমিক্যাল) ব্যবসায়ী ইমাম উদ্দিনকে (৫৬) কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত এই আদেশ দেন।
গত রোববার বংশাল এলাকায় অভিযান চলাকালে আগাসাদেক রোডের একটি বাসার নিচতলায় ৯১ ড্রাম রাসায়নিক পণ্য পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক শরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে ব্যবসায়ী ইমাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে বংশাল থানায় অগ্নি প্রতিরোধ ও অগ্নি নির্বাপণ আইনে মামলা করেন।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, আবাসিক ভবন বা যেকোনো স্থানকে মালগুদাম কিংবা রাসায়নিক কারখানা করতে হলে অবশ্যই অনুমতি লাগবে। কিন্তু ইমাম উদ্দিন কোনো অনুমতি না নিয়েই বাসার নিচতলায় কেমিক্যাল রাখেন। বাসায় হাতেনাতে কেমিক্যাল পাওয়ার পর তিনি কোনো ধরনের কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।
অগ্নি প্রতিরোধ ও অগ্নি নির্বাপণ আইনের ৪ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি কোনো ভবন বা স্থানকে মালগুদাম বা কারখানা হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলে অগ্নি নির্বাপণ ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা অধিদপ্তরের অনুমতি লাগবে। অনুমতি না নিয়ে মালগুদাম বা কারখানা করলে এর শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড।
মামলার এজাহারে বাদী বলেন, পুরান ঢাকার আবাসিক ভবন থেকে কেমিক্যাল প্লাস্টিক এবং ঝুঁকিপূর্ণ দাহ্য পদার্থের কারখানা ও গোডাউন সরানোর জন্য গঠিত টাস্কফোর্স কমিটি ৩ মার্চ দুপুরে অভিযান চালায়। অভিযান চালানোর সময় ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৫৫ নম্বর আগাসাদেক রোডের ইমাম উদ্দিনের বাড়ির ভেতরে প্রচুর পরিমাণ কেমিক্যালের ড্রাম দেখতে পাওয়া যায়। বাসার নিচতলার গুদামে রাসায়নিক পণ্য মজুত রাখার জন্য কোনো ধরনের ফায়ার লাইসেন্স তিনি দেখাতে পারেননি। ৯১ ড্রাম কেমিক্যাল ওই বাসা থেকে জব্দ করা হয়। তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত নির্বাহী হাকিমের নির্দেশে ব্যবসায়ী ইমাম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আদালতে দেওয়া প্রতিবেদনে বংশাল থানা-পুলিশ বলেছে, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, আসামি ইমাম উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে বাসার নিচতলায় কেমিক্যাল রেখে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। কিন্তু কেমিক্যাল সংক্রান্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে কেমিক্যাল গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করার কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। এ ঘটনার সঙ্গে আসামি জড়িত আছেন। আসামির কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। প্রয়োজনে তাঁকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হবে।
রাসায়নিক ব্যবসায়ী ইমাম উদ্দিনকে জামিন না দিয়ে তাঁকে জেলহাজতে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বংশাল থানার পরিদর্শক কায়কোবাদ কাজী।
রাসায়নিক পণ্য জব্দ তালিকার সাক্ষী ও স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ইমাম উদ্দিন বহু বছর ধরে বাসার নিচে কেমিক্যালের গোডাউন বানিয়ে ব্যবসা করছেন। তিনতলা বাসার নিচে এই গোডাউন। এই বাসায় আসামি ইমাম উদ্দিন নিজে বসবাস করেন না।
উল্লেখ্য, চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ওয়াহেদ ম্যানশনের কেমিক্যালের গোডাউনের আগুনে পুড়ে মারা যান ৭১ জন। ওয়াহেদ ম্যানশনের নিচতলাসহ ভবনের একাধিক ফ্লোরে রাসায়নিক কারখানার গুদাম ছিল। এর কোনো অনুমোদন ছিল না।