ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগের মৃত্যুপথযাত্রীদের ব্যথানাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয় অক্সিমরফোন। চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই এই ওষুধ খোলাবাজারে বিক্রি করছিলেন মো. আলমগীর সরকার ও জাহিদুল ইসলাম। মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তাঁদের গ্রেপ্তারের খবর জানিয়েছে।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানান, ১৩ হাজার অক্সিমরফোন বড়িসহ ওই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব বড়ি মাদকসেবীদের কাছে বিক্রি করছিল ওই দুই ব্যক্তি।
সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নির্দিষ্টসংখ্যক ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অক্সিমরফোন বিক্রি ও বাজারজাত করার অনুমোদন দেয়। এ জন্য অনুমতিপত্র দেখিয়ে উৎপানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অক্সিমরফোন কিনতে হয়। এমনকি কোন পথ দিয়ে অক্সিমরফোন সনদপ্রাপ্ত বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান নিয়ে যাবে, সেটাও আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে হয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে।
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, বাংলাদেশে অক্সিমরফোন উৎপাদনের অনুমতি আছে একটিমাত্র প্রতিষ্ঠানের। আর সারা দেশে ১২০টি সদনপ্রাপ্ত বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান আছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো সনদধারী বিভিন্ন পরিবেশকের মাধ্যমে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অক্সিমরফোন সরবরাহ করে থাকে। গত পাঁচ মাসে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পাঁচ লাখ ডোজ অক্সিমরফোন বিক্রি করে। এগুলো চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র দেখিয়ে অনুমোদিত পরিমাণে ব্যবহার করার কথা। কিন্তু পুলিশ জানতে পারে, ইদানীং অক্সিমরফোন খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের শিক্ষার্থীরা এই অক্সিমরফোন গুঁড়ো করে যেকোনো সিরাপ বা পানীয়র সঙ্গে মিশিয়ে মাদক হিসেবে ব্যবহার করছে।
অক্সিমরফোন সেবনে মস্তিষ্ক বোধহীন ও অসাড় হয়ে যায়। ক্রমাগত অক্সিমরফোনের ব্যবহারে এটির প্রতি নির্ভরশীলতা তৈরি হয়। ব্যবহারকারীরা এটি পাওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রকার অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
ডিবির লালবাগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মো. রাজীব আল মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, সারা দেশের ১৮টি জেলায় অক্সিমরফোন বিক্রির অনুমতি আছে। কিন্তু দেখা গেছে, যেসব প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পেয়েছে, তার বড় অংশই বরিশালে। এমনকি বরিশালের উপজেলাতেও বিক্রির অনুমোদন আছে। ঢাকায় আছে ১৭টি প্রতিষ্ঠানের। কোন জেলায় কোন যুক্তিতে অক্সিমরফোন বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তা যাচাই করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর গত সোমবার খুলনার বয়রা মুজগন্নী থেকে মো. আফিস আহম্মেদ, আফিসের বন্ধু অর্ণব কুমার শর্মা ও সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যবস্থাপক মো. মামুনুর রশিদকে নতুন মাদক ডিওবিসহ গ্রেপ্তার করেছে। মঙ্গলবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তেজগাঁও কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারই প্রথম দেশে ডিওবি পাওয়া গেল। এই চক্রটি খুলনা থেকে ডিওবি ও এলএসডি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠাত।
জিজ্ঞাসাবাদে মো. আফিস আহাম্মেদ বলেন, তিনি ডার্কওয়েবে পোল্যান্ডে থাকা ডিওবি বিক্রেতাদের সঙ্গে যুক্ত এবং বিটকয়েনে তাঁদের মাদক কেনার অর্থ পরিশোধ করে থাকেন।