প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭ জন (বর্তমানে ১৫ জন বহিষ্কৃত) শিক্ষার্থীসহ ১২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচারকাজ শুরু হয়েছে। আগামী ৩০ মার্চ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুর তারিখ ঠিক করা হয়েছে।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের বিচারক অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল হক আজ সোমবার এ আদেশ দেন। প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী সায়েম চৌধুরী।
আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, অভিযোগ গঠনের সময় আদালতে উপস্থিত থাকা আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। মামলার পলাতক ২৫ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন আদালত। মামলায় আসামিদের মধ্যে অন্তত ২১ জন ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতা-কর্মী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ ইউনিটের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে ২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করে পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মামলাটি তদন্ত করে ২০১৯ সালের ২৪ জুন ঢাবির ৮৭ জন শিক্ষার্থীসহ ১২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় সিআইডি। এঁদের মধ্যে ৪৬ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
পাবলিক পরীক্ষা আইনের মামলায় আজ সোমবার অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো। এ ছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের অপর মামলাটি ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হওয়া এবং জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭ জনের মধ্যে ১৫ জনকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
মামলার কাগজপত্র ও সিআইডি–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার শুরু ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর মধ্যরাতে। ওই দিন গণমাধ্যমকর্মীদের কিছু তথ্যের সূত্র ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল থেকে ছাত্রলীগের তৎকালীন নেতা মহিউদ্দিন রানা এবং অমর একুশে হল থেকে আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। তাঁদের তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন পরীক্ষার হল থেকে ইশরাক হোসেন নামের এক পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়। এ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদে একে একে চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্যদের নাম বেরিয়ে আসে। পরীক্ষা শুরুর আগে প্রেস থেকে ছাপা প্রশ্ন নিয়ে প্রথমে তাঁরা মুঠোফোনে খুদে বার্তার মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের কাছে উত্তর পাঠাতেন। পরে তাঁরা ডিজিটাল যন্ত্রাংশের ব্যবহার বাড়ান। ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, অন্তত দুটি বিসিএস পরীক্ষাসহ বিভিন্ন সরকারি চাকরির প্রশ্নপত্র ফাঁসেও এই চক্র সক্রিয় ছিল।
সিআইডির তৎকালীন প্রধান শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মূলত দুভাবে জালিয়াতি হয়েছিল। একটি চক্র প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে; অন্যটি পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র নিয়ে দ্রুত তা সমাধান করে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের সরবরাহ করতেন।