রাজশাহীর শাহ মখদুম থানার কাছে রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া কলেজছাত্রী লিজা রহমান (১৭) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লিজা মারা যায়।
বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শঙ্কর পাল এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, লিজার শরীরের ৬৪ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। আজ সকাল সাড়ে সাতটায় তার মৃত্যু হয়।
গত শনিবার দুপুরে রাজশাহী মহিলা কলেজের ছাত্রী লিজা শাহ মখদুম থানায় গিয়েছিল স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে। পুলিশ তাকে তাদের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। থানা ও ভিকটিম সেন্টার একই কম্পাউন্ডের মধ্যে। সেখানে গিয়ে লিজা শুধু নিজের নাম লেখে। তারপর সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে বাইরে আসে। এরপর থানা থেকে খানিকটা দূরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে সে প্রকাশ্যে নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই দিনই তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
লিজার বাড়ি গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায়। সে রাজশাহী মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। লিজা তার দত্তক মা-বাবার কাছে বড় হয়। একটি ছেলেসন্তান থাকায় লিজাকে দত্তক নেন তাঁরা। তাঁকে লেখাপড়া করাচ্ছিলেন। কয়েক মাস আগে তাঁরা জানতে পারেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের এক ছেলের সঙ্গে আদালতে গিয়ে লিজা বিয়ে করেছে। রাজশাহী শহরে বাসা ভাড়া করে সংসার করছে।
লিজার দত্তক মা-বাবার ভাষ্য, বিয়ের বিষয়টি এখনই কাউকে জানাতে চায়নি লিজা। পাঁচ বছর পর স্বামীর পড়াশোনা শেষ হলে বিষয়টি নিজেদের পরিবারকে জানানো হবে বলে তারা ঠিক করেছিল। কিন্তু বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই ছেলের পরিবারের লোকজন বিষয়টি জেনে যায়।
লিজার দত্তক ভাই জানান, ছেলেটির পরিবারের লোকজন স্থানীয় এক চেয়ারম্যানকে দিয়ে লিজার মাকে (দত্তক মা) ফোন করান। তিনি জানান, ওই পরিবার বিষয়টি মেনে নেয়নি। ছেলের বাড়িতে মেয়ে এলে মেয়েকে মেরে ভ্যানে করে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
শাহ মখদুম থানা সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন লিজা থানায় অভিযোগ করতে এসেছিল। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছিল। এ ধরনের বিষয় সাধারণত ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নিষ্পত্তি করা হয়। তাই একজন নারী কনস্টেবল দিয়ে লিজাকে সেখানে পাঠানো হয়েছিল। তবে লিজা অভিযোগ লেখেনি। সেখান থেকে বের হয়ে গিয়ে অল্প সময়ের ব্যবধানে নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।