পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুল করিম হত্যা মামলায় বেসরকারি মাইন্ড এইড অ্যান্ড সাইকিয়াট্রি ডি-অ্যাডিকশন সেন্টারের অন্যতম মালিক ফাতেমা আক্তারকে চার দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ রোববার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এই আদেশ দেন।
এ ছাড়া পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুল করিমকে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে মাইন্ড এইড অ্যান্ড সাইকিয়াট্রি ডি-অ্যাডিকশন সেন্টারের দুজন কর্মচারী ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁরা হলেন হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় অসীম চন্দ্র পাল এবং শেফ মাসুদ খান। প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) মনিরুজ্জামান মণ্ডল।
আদালত সূত্র বলছে, এই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সাইকিয়াট্রি ডি-অ্যাডিকশন সেন্টারের অন্যতম মালিক ফাতেমা আক্তারকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন আদাবর থানার পরিদর্শক ফারুক হোসেন। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে তাঁকে চার দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন। এসআই মনিরুজ্জামান মণ্ডল জানান, এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে হাসপাতালের দুজন কর্মচারী স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। অন্য আটজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুল করিমকে মারধরের ভিডিও ফুটেজ দেখে কার কী ভূমিকা ছিল, জিজ্ঞাসাবাদ করে সে বিষয়গুলো মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। রিমান্ডে থাকা আসামিরা এলোমেলো তথ্য দিচ্ছেন। তাঁরা একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন। তাঁদের দাবি, হাসপাতালে আসা রোগীদের সমস্যার ধরন দেখে চিকিৎসা বলে দিতেন ফাতেমা আক্তার। প্রথম অবস্থায় সবাইকে মারধর করে দুর্বল করে ফেলা হতো। পরে বাইরে থেকে চিকিৎসক এনে দেখানো হতো।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগীর চিকিৎসা পরামর্শ দিতেন ফাতেমা। তিনি মনোবিজ্ঞানে পড়েছেন এবং পরে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেন বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন। তবে ফাতেমা তাঁর ডিগ্রির কোনো সনদ দেখাতে পারেননি।
এখন যে আটজন পুলিশি হেফাজতে আছেন তাঁরা হলেন মাইন্ড এইড হাসপাতালের মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ, কো-অর্ডিনেটর রেদোয়ান সাব্বির, কথিত ফার্মাসিস্ট তানভীর হাসান, ওয়ার্ডবয় জোবায়ের হোসেন, তানিফ মোল্লা, সজীব চৌধুরী, লিটন আহাম্মদ ও সাইফুল ইসলাম।
মানসিক সমস্যায় ভুগে আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আনিসুল। ভর্তির পর কয়েক মিনিটের মধ্যেই মারা যান তিনি। পরিবারের অভিযোগ, ভর্তির পরপর হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন।
সিসিটিভি ফুটেজেও দেখা গেছে, পুলিশ কর্মকর্তাকে ভর্তির পরই একটি কক্ষে নিয়ে হাসপাতালটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মারধর করছেন।