পুলিশের বিচক্ষণতার কারণে দুই বছরের সাজা ভোগ থেকে বেঁচে গেছেন এক নিরপরাধ ব্যক্তি। আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশি হেফাজত থেকে ছাড়া পেয়েছেন নিরপরাধ ব্যক্তি আর ধরা পড়েছেন প্রকৃত অপরাধী। ঘটনাটি ঢাকার ধামরাই উপজেলার চাউনা ঘোড়াকান্দা গ্রামের।
চাউনা ঘোড়াকান্দা গ্রামের ওই দুই ব্যক্তির নামই সালাউদ্দিন। দুজনেরই বাবার নাম আয়নাল হক। তবে তাঁদের একজনকে এলাকার লোকজন কালাম নামে চেনেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার মলাটিয়া গ্রামে নানার বাড়িতে বসবাস করলেও এলাকার লোকজন জানতেন না। যিনি এলাকায় থাকেন তিনি সালাউদ্দিন নামেই পরিচিত। তিনি পেশায় পশুর চিকিৎসক।
ধামরাই থানার পুলিশ ও এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধামরাইয়ের বারবারিয়ায় ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডে চুরির ঘটনায় কারখানার পক্ষ থেকে ২০১২ সালের ১৩ নভেম্বর ধামরাই থানায় মামলা করা হয়। মামলায় এলাকায় কালাম নামে পরিচিত কারখানার নিরাপত্তাকর্মী সালাউদ্দিনসহ আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়। ধামরাই থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) হেলাল উদ্দিন মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে স্থানীয় আমজাদ হোসেনের সহায়তায় মামলা দায়েরের এক দিন পর ১৫ নভেম্বর রাজধানীর মিরপুর থেকে সালাউদ্দিনকে (কালাম) গ্রেপ্তার করেন। পরে আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। ১৫ দিন পর জেল থেকে জামিনে বের হয়ে তিনি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার মলাটিয়া গ্রামে নানার বাড়ি চলে যান। এরপর আর তাঁকে চাউনা ঘোড়াকান্দা গ্রামে দেখা যায়নি।
পুলিশ জানায়, জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর সালাউদ্দিন আদালতে হাজিরা না দেওয়ায় তাঁর অনুপস্থিতিতে মামলার রায় হয়। রায়ে আদালত তাঁকে দুই বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন। রায় ঘোষণার পর পরোয়ানা পাঠানো হয় ধামরাই থানায়। পরোয়ানা পাওয়ার পর ধামরাই থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) খোকন মিয়া নাম, বাবার নাম ও গ্রামের নামের মিল পেয়ে শুক্রবার বিকেলে পশু চিকিৎসক সালাউদ্দিনকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে কিছুটা গরমিল পেয়ে তিনি বিষয়টি থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহাকে জানান। পরে সালাউদ্দিনকে পুলিশ হেফাজতে রেখে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনে মাঠে নামেন ওসি। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ওসি মানিকগঞ্জ থেকে সাজাপ্রাপ্ত সালাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে নির্দোষ সালাউদ্দিনকে ছেড়ে দেন।
ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, সাজাপ্রাপ্ত সালাউদ্দিনকে এলাকায় লোকজন কালাম নামেই জানতেন। তিনি কোথায় থাকতেন তাও এলাকার লোকজনের জানা ছিল না। এ কারণেই নাম, বাবার নাম ও ঠিকানার মিল পেয়ে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে পশু চিকিৎসক সালাউদ্দিনকে আটক করা হয়। পরে তথ্য পাওয়া যায় এই সালাউদ্দিন কখনো ইনসেপ্টার নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন না বা কখনো গ্রেপ্তার হননি। এই দুই তথ্যের গরমিল পেয়ে যোগাযোগ করা হয় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন ধামরাই থানার এসআই (বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় পরিদর্শক, তদন্ত হিসেবে কর্মরত) হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে। তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী যোগাযোগ করা হয় আমজাদ হোসেনের সঙ্গে। পরে আমজাদ হোসেনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গতকাল শনিবার বিকেলে মানিকগঞ্জের মলাটিয়া গ্রাম থেকে সাজাপ্রাপ্ত সালাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তিনি চুরির মামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। এরপর নির্দোষ সালাউদ্দিনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ছাড়া পাওয়ার পর সালাউদ্দিন বলেন, তাঁর দেওয়া তথ্য পুলিশ বিচক্ষণতার সঙ্গে খতিয়ে না দেখলে দোষ না করেও হয়তোবা তাঁকে সাজা ভোগ করতে হতো।