পুলিশের দাবি করা গণপিটুনির চিত্র মেলেনি সিসি ক্যামেরায়

রায়হান উদ্দিন আহমদ
ছবি: সংগৃহীত

সিলেট নগরের কাষ্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে আহত হয়ে কোতোয়ালি থানার বন্দরবাজার ফাঁড়িতে রায়হান উদ্দিন আহমদ (৩৪) নামের যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। তবে ওই এলাকায় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের স্থাপন করা ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় এমন কোনো গণপিটুনির চিত্র পাওয়া যায়নি।  

কাষ্টঘর এলাকা সিলেট সিটি করপোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। এই এলাকার পুরোটাই ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার আওতাভুক্ত। এসব ক্যামেরার মনিটর রয়েছে ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের কার্যালয়ে। রোববার রাতে তাঁর কার্যালয়ে গিয়ে শনিবার রাত ১২টা থেকে রোববার সকাল ৭টা পর্যন্ত কাষ্টঘর এলাকার সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজে কোনো গণপিটুনির দৃশ্য পাওয়া যায়নি। এমন কী এই সময়ে কাষ্টঘর এলাকায় পুলিশের কোনো টহলও দেখা যায়নি।

ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল প্রথম আলোকে বলেন, 'আমিও সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা রাত ও সকালের ফুটেজ দেখেছি। শনিবার রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত ওই এলাকায় গণপিটুনির কোনো ঘটনা দেখা যায়নি। ফুটেজে সন্দেহজনক কিছুই চোখে পড়েনি। আমি কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরাও এ রকম কিছু ঘটেছে বলে শুনেননি।

কাষ্টঘরের কয়েকজন স্থায়ী বাসিন্দা বলেছেন, তাঁরা কেউই শনিবার রাতে বা রোববার ভোরের দিকে কোনো গণপিটুনির কথা শুনেননি। তবে রোববার সকাল ১০টার দিকে এলাকায় পুলিশ গিয়ে জানায়, ভোরে এই এলাকায় গণপিটুনিতে এক যুবক নিহত হয়েছেন।

কাষ্টঘরের বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আইনজীবী বলেন, ‘প্রায় রাতেই এই এলাকায় মাদকসেবীদের চেঁচামেচি শোনা যায়। পুলিশের বাঁশির শব্দও শোনা যায়। তবে শনিবার রাতে বা রোববার ভোরে এমন কিছুই শুনিনি। গণপিটুনির ঘটনা ঘটলে তো অন্তত কিছু শোরগোল, চিৎকার শোনা যেত। তা-ও শোনা যায়নি।’

কাষ্টঘরে গণপিটুনিতে আহত রায়হানকে বন্দরবাজার ফাঁড়ি থেকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়া। সিসি ক্যামেরায় গণপিটুনির কোনো দৃশ্য পাওয়া যায়নি বলে তাঁকে জানালে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) সৌমেন মিত্রও কোনো কথা বলতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, 'আমরা তদন্ত করে দেখছি।’

সিলেট মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোতির্ময় সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাটির তদন্ত চলছে। তদন্তের পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা হবে।’

রায়হানের পরিবারের ভাষ্য, নগরীর নিহারীপাড়ার বাসিন্দা রায়হান রিকাবিবাজার এলাকার একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চাকরি করতেন। গত শনিবার রাতে বাসায় না ফেরায় তাঁকে খোঁজাখুঁজি করেন পরিবারের সদস্যরা। রোববার ভোরে রায়হানের পরিবারের সদস্যদের কাছে বন্দরবাজার ফাঁড়ি থেকে ফোনে জানানো হয়, রায়হান পুলিশ হেফাজতে আছেন। তাঁকে ছাড়িয়ে নিতে হলে ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। তাঁরা এ সময় পুলিশ ফাঁড়িতে যান। তবে গিয়ে জানতে পারেন, রায়হান মারা গেছেন। পরে হাসপাতালের মর্গে গিয়ে তাঁর লাশ শনাক্ত করেন পরিবারের সদস্যরা।

এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে রায়হানের পরিবারকে জানানো হয়, নগরীর কাস্টঘর এলাকায় একটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ধরা পড়ে গণপিটুনিতে রায়হান আহত হন। পরে তিনি মারা যান।

তবে রায়হানের পরিবার খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, কাস্টঘর এলাকায় কোনো ছিনতাই বা গণপিটুনির ঘটনা ঘটেনি। তখন পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যুর অভিযোগ তোলা হয়।