রাজধানীর মালিবাগ মোড়ে বিস্ফোরণে পুলিশের এক সহকারী উপপরিদর্শকসহ (এএসআই) তিনজন আহত হওয়ার ঘটনার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
মালিবাগ মোড়ে গতকাল রোববার রাতে বিস্ফোরণে এক এএসআইসহ তিনজন আহত হয়েছেন। বিস্ফোরণটি হয়েছে পুলিশের একটি গাড়িতে। জঙ্গিগোষ্ঠীর ইন্টারনেটভিত্তিক তৎপরতা নজরদারিতে যুক্ত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স জানিয়েছে, আইএস ঢাকার ঘটনার দায় স্বীকার করেছে।
এর আগে গত ২৯ এপ্রিল রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় পুলিশের ওপর ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হন। ওই সময় ওই ঘটনার দায় স্বীকার করেছিল আইএস।
মালিবাগ মোড়ে বিস্ফোরণটি হয়েছে পুলিশের একটি গাড়িতে। বিস্ফোরণের কারণ বোমা না অন্য কিছু, এ ব্যাপারে নিশ্চিত নয় পুলিশ।
যেখানে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, তার পাশেই পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কার্যালয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত রাত পৌনে নয়টার দিকে মালিবাগ মোড়ে পেট্রলপাম্পের উল্টো দিকে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ভ্যানের পেছনের অংশে আগুন ধরে যায়। ভ্যানটির পাশে তখন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করছিলেন পুলিশের একজন নারী কর্মকর্তা। বিস্ফোরণে তিনি পায়ে আঘাত পান। পথচারী এক নারী এবং এক রিকশাচালকও আহত হন।
পল্টন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) প্রথম আলোকে জানান, বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন তিনজন। তাঁদের মধ্যে ট্রাফিক পুলিশের এএসআই রাশেদা আক্তার এবং রিকশাচালক লাল মিয়াকে প্রথমে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
রাতে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আহত নারী পথচারীকে রাস্তায় থাকা এক ব্যক্তি মোটরসাইকেলে করে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে দেখেছেন তাঁরা।
এর আগে গত ২৯ এপ্রিল রাত পৌনে আটটার দিকে গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের সামনে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালায় আততায়ীরা। ওই হামলায় ট্রাফিক পুলিশের দুই কনস্টেবল ও কমিউনিটি পুলিশের এক সদস্য আহত হন। ঘটনার পাঁচ ঘণ্টা পর আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয়। বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম প্রচারকারী সংস্থা সাইট ইন্টেলিজেন্স জানায়, হামলাটি ছিল দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশে পুলিশের ওপর আইএসের চালানো প্রথম হামলা। প্রথমে ককটেল বলা হলেও পরে পুলিশ জানায়, যে বস্তুটি দিয়ে হামলা চালানো হয়, সেটি ইমপ্রুভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস বা বোমা।
গুলিস্তানে পুলিশের ওপর বোমা হামলাকারীদের এখনো শনাক্ত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে কাজটি যে কোনো জঙ্গি অথবা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর, সে বিষয়ে পুলিশ মোটামুটি নিশ্চিত।
বিস্ফোরণের পর পুলিশের বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান এবং আলামত সংগ্রহ করেন। যে গাড়িতে বিস্ফোরণ হয়েছে, তা পুলিশের এসবির একটি পিকআপ। এর পেছনের অংশের বসার জায়গার এক পাশ পুড়ে গেছে। এ ছাড়া পিকআপের পেছনের দিকের কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পেট্রলপাম্পের কর্মী এনামুল শেখ বলেন, বিস্ফোরণের সময় গাড়ির সামনের আসনে চালক ছিলেন। তবে পেছনে বসার জায়গায় কেউ ছিলেন না। গাড়িতে কোনো গ্যাস সিলিন্ডার ছিল না। বিস্ফোরণের পর পেট্রলপাম্প থেকে অগ্নিনির্বাপণযন্ত্র এনে আগুন নেভানো হয়। আগুন নেভানোর কাজে তিনিসহ পাম্পের অন্য কর্মীরা অংশ নেন।
মালিবাগে বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে যান কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের প্রধান মনিরুল ইসলামসহ পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। সেখানে সাংবাদিকদের মনিরুল বলেন, কী কারণে বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এখনই কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।
গুলিস্তানে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনার সঙ্গে এর কোনো যোগসূত্র রয়েছে কি না, সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে মনিরুল বলেন, গুলিস্তানে কারা হামলা চালিয়েছিল, সে রহস্য এখনো উন্মোচন করা যায়নি। মালিবাগের ঘটনা কীভাবে বা কারা ঘটিয়েছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
*আরও পড়ুন:
মালিবাগে পুলিশের ভ্যানে বিস্ফোরণ