টাঙ্গাইলের গোপালপুরে তাসের আড্ডায় পুলিশি অভিযানের সময় এক ব্যক্তি মৃত্যুর ঘটনায় উপপরিদর্শকসহ (এসআই) আট পুলিশকে আজ শনিবার প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্তে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গোপালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুন বলেন, উপজেলার ঝাওয়াইল টেকনিক্যাল কলেজ মাঠে কয়েকজন টাকার বিনিময়ে তাস খেলছেন—এমন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ গতকাল শুক্রবার সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় সেখান থেকে চারজনকে আটক করা হলেও দুজন দৌড়ে পালিয়ে যান। আটককৃতদের নিয়ে পুলিশ চলে আসে। পরে খবর পাওয়া যায় যে দৌড়ে পালানো আবদুল হাকিম (৫০) নামের একজন মারা গেছেন। তিনি পেশায় মাংস ব্যবসায়ী।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, একটি মাইক্রোবাস নিয়ে সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরা সেখানে গিয়ে উপস্থিত সবাইকে ধরে ফেলেন। পরে প্রত্যেককে চড়থাপ্পড় ও লাথি মারেন। এতে আবদুল হাকিম অসুস্থ হয়ে মারা যান। পরে পুলিশ তাঁকে ফেলে বাকিদের নিয়ে চলে যায়।
ঝাওয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে আবদুল হাকিমকে মাঠে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে কয়েকজনের সহায়তায় তিনি (চেয়ারম্যান) তাঁকে গোপালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।
আবদুল হাকিমের মৃত্যুর খবর এলাকায় পৌঁছার পর মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। ইফতারের পর কয়েক শ মানুষ গোপালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে ভিড় করে। তারা পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। একপর্যায়ে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।
গতকাল রাত ১০টার দিকে স্থানীয় সাংসদ তানভীর হাসান, টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার (এসপি) সঞ্জিত কুমার রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম গোপালপুরে যান। তাঁরা বিক্ষোভকারীদের দাবিগুলো শোনেন। পরে এসপি ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ তুলে নেয়।
পুলিশ সূত্র জানায়, এই ঘটনা তদন্তের জন্য টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদুর রহমান মনিরকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন জেলা বিশেষ শাখার ডিআই-১ হারেস আলী মিয়া ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (উত্তর) সাজ্জাত হোসেন। কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে ঝাওয়াইলের ওই অভিযানে থাকা পুলিশ দলের আটজনকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন এসআই আবু তাহের, এএসআই আশরাফুল আলম এবং কনস্টেবল ফরিদ আহমেদ, গোলাম মোস্তফা, খায়রুল ইসলাম, সালমান সাদিক, সাদ্দাম হোসেন ও আবদুস ছাত্তার।
আজ দুপুরে আবদুল হাকিমের লাশের ময়নাতদন্ত টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল মর্গে সম্পন্ন হয়েছে। হাকিমের মৃত্যুর ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। তবে ঝাওয়াইলের জুয়ার আড্ডা থেকে আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এসআই আবু তাহের বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন।