স্ত্রী মাহমুদা খানম (মিতু) হত্যাকাণ্ডে পাঁচ বছর পর গ্রেপ্তার বাবুল আক্তার পুলিশকে তাঁর বাসার ভুল ঠিকানা দিয়েছেন। মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় যে মামলা করেছেন, সেখানেও তাই বাবুল আক্তারের ঢাকার ঠিকানা ভুলভাবে লেখা হয়েছে।
আজ শুক্রবার বিষয়টি মামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) নজরে আসে। পিবিআইয়ের উপমহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার মামলার এজাহারের তথ্য নিয়ে প্রথম আলো বাবুল আক্তারের বাসাটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, বাবুল আক্তারের বাসার ঠিকানা লেভেল-৭, সড়ক নম্বর ১১, বাসা নম্বর ২২, ব্লক সি, বাবর রোড। আদতে মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে কোনো বাসার হোল্ডিং নম্বরই এমন নয়। ঘণ্টা দুয়েক খুঁজেও তাই বাসাটি পাওয়া যায়নি।
বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বাবুল আক্তার পিবিআইকে যে ঠিকানা দিয়েছেন, তার ভিত্তিতেই তিনি মামলায় ওই ঠিকানা লেখেন।
ওই ঠিকানায় মিতুর দুই সন্তান বাবুল আক্তারের বর্তমান স্ত্রীর সঙ্গে আছেন বলে বাবুল পুলিশকে জানিয়েছিলেন। নাতি-নাতনিদের নিয়ে তাঁরা চিন্তায় আছেন।
শুক্রবার ভুল ঠিকানা দেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে বাবুল আক্তারের কাছে সঠিক ঠিকানা চায় পিবিআই। প্রথমে তিনি ঠিকানা দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে ঠিকানা দিয়ে দেন। বাবুল আক্তারের গাড়িচালকের সহায়তায় ঠিকানা শনাক্ত করার চেষ্টা করে তারা। এই গাড়িচালককে নিয়েই বাবুল আক্তার পিবিআইয়ের ডাকে গত সোমবার চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোহাম্মদপুরের ওই বাসায় তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরা নেই। সোমবারই তাঁরা বাসায় তালা দিয়ে চলে গেছেন। ওই ভবনের নিরাপত্তারক্ষী মো. রিপন প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্যার সোমবার অফিসের গাড়িতে চট্টগ্রাম গেছেন। ওই দিনই ওনার ফ্যামিলি চলে যায়।’
রিপন ওই ভবনে সাত বছর ধরে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করছেন। বাবুল এই বাসায় উঠেছেন বছরখানেক আগে। এ সময়ের মধ্যে তাঁর কোনো আত্মীয়স্বজনকে তিনি আসতে দেখেননি বলে জানান।
রিপন বলেন, ‘বাইরের লোক বলতে বাবুল আক্তারের অফিসের লোকজন পরিচয়ে দু-একবার কেউ কেউ এসেছেন। তাঁর সন্তানেরাও খুব একটা বাইরে বের হয় না।’
বাবুল আক্তারের ভুল ঠিকানা দেওয়ার কারণ কী হতে পারে? এ প্রশ্নের জবাবে তদন্তে যুক্ত কর্মকর্তারা বলেছেন, বাবুল আক্তার সন্তানদের তাঁর আত্মীয়স্বজনের কাছে রাখতে চান। সে কারণেই হয়তো ঠিকানা ভুল দিয়েছেন।
এ বিষয়ে পিবিআইয়ের উপমহাপরিদর্শক প্রথম আলোকে বলেন, শিশুরা কার জিম্মায় থাকবে, তা নিয়ে আগামীকাল শনিবার থেকে তাঁরা আইনানুগভাবে কী করা যায় সে বিষয়ে কাজ শুরু করবেন।
মাহমুদা খানম মিতুর দুই সন্তানকে নিজেদের জিম্মায় নিতে চান তাঁর (মিতু) মা-বাবা। তাঁদের অভিযোগ, সাড়ে তিন বছর ধরে নাতি-নাতনির সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি। তাঁরা তাঁদের উদ্বেগের কথা পুলিশকে জানিয়েছেন। অন্যদিকে বাবুল আক্তারকে রিমান্ডে যাঁরা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তাঁরা বলছেন, বাবুলও তাঁর সন্তানেরা কার জিম্মায় থাকবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন আছেন।
বাবুল-মিতুর প্রথম সন্তানকে স্কুলে নেওয়ার পথেই ২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরীতে খুন হয়েছিলেন মিতু। নগরীর জিইসি মোড়ের কাছে দিনের বেলায় কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল সে সময় পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুকে।
স্ত্রী নিহত হওয়ার পর ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে গিয়ে বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছিলেন। প্রায় পাঁচ বছর পর গত বুধবার ওই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পিবিআই। ওই দিনই বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বাবুল এখন পাঁচ দিনের রিমান্ডে পুলিশি হেফাজতে আছেন।
স্ত্রী খুন হওয়ার কয়েক মাসের মাথায় পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়ার পর চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন বাবুল আক্তার। পরে ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি তিনি একটি ব্যবসা শুরু করেছিলেন বলে তাঁর পরিচিতজনেরা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন।