দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাটের জন্য আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) গ্রেপ্তারের পর আজ রোববার তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশ, বসবাস, বেনামে সম্পত্তি কেনা, আইনবহির্ভূতভাবে অর্থ বাংলাদেশ থেকে ভারতে আনা—এসব অভিযোগে পি কে হালদার ও তাঁর পাঁচ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে ইডি। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জানিয়েছে, দেশে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে মোট ৩৭টি মামলা আছে। তার মধ্যে ৩৬টি মামলা অর্থপাচার ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের।
পি কে হালদার ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর দুদকের করণীয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন সংস্থার আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সুহাদা আফরিন।
প্রথম আলো: ইডি কি পি কে হালদারকে আপনাদের দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করেছে?
খুরশীদ: মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) ২০১২-এর আওতায় ভারতকে পি কে হালদারের বিষয়ে তথ্য দেয় দুদক। এর ভিত্তিতে ইডি অনুসন্ধান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে। বাংলাদেশের অনুরোধকে গুরুত্ব দিয়ে একই দিনে ৯টি বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে ইডি। ৯টি বাড়ির মধ্যে ৩টি বাড়ি তারা এক সপ্তাহ ধরে রেকি করেছিল, যার একটা থেকে পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে আপনাদের কিছু জানিয়েছে ভারত?
খুরশীদ: এটা তারা এখনই জানাবে না। তারা যখন এমএলএআরের ভিত্তিতে বাংলাদেশকে প্রতিবেদন পাঠাবে, তখনই জানাবে। এ ছাড়া ‘গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট’ প্রক্রিয়ায় তা তারা জানাতে পারে।
পি কে হালদারের বিষয়ে এখন দুদকের কাজ কী হবে?
খুরশীদ: দুদকের কাজ চলছে। তিনটা মামলার তদন্ত শেষ হয়েছে। দুদকের এখন মুখ্য কাজ হবে, বহিঃসমর্পণ চুক্তি অনুসারে পি কে হালদারকে যদি দ্রুত বাংলাদেশে আনা যায়, তাহলে দেশে এনে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা খুবই প্রয়োজন। কারণ, মামলায় ইতিমধ্যে যাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তাঁদের দেওয়া তথ্য–উপাত্ত মিলিয়ে দেখতে হবে। এ ছাড়া তাঁর নিজেরও তো বক্তব্য আছে। এত বড় একটা আর্থিক কেলেঙ্কারি, সে কীভাবে করল, তা জানা দরকার। একা তো তাঁর পক্ষে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে নেওয়া সম্ভব নয়। নিশ্চয়ই তাঁর সঙ্গে আরও অনেক রাঘববোয়াল ছিল। তাঁরা কারা, সব বের করতে হবে। পি কে হালদারকে যদি বহিঃসমর্পণ চুক্তির মাধ্যমে দেশে আনা হয়, তখন দুদক আদালতের অনুমতি নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ পাবে।
ভুক্তভোগীদের টাকা পাওয়ার বিষয় এখন কী হবে?
খুরশীদ: এমএলএআরের আওতায় মামলাগুলো যদি আমরা সফলভাবে করতে পারি, তাহলে আমাদের দেশের আদালতের মাধ্যমে সে দেশে পি কে হালদারের সম্পদ জব্দ করতে পারব। তারপর বিচারপ্রক্রিয়ায় যখন রায় হবে, তখন ভুক্তভোগীরা টাকা পাবেন। তবে সেটা দীর্ঘ ও জটিল আইনিপ্রক্রিয়া।
পি কে হালদারকে ফিরিয়ে আনার জন্য দুদক কি আবেদন জানাবে?
খুরশীদ: দুদক তো আগেই আবেদন জানিয়েছে। এখন সরকার বহিঃসমর্পণ চুক্তির আওতায় ফিরিয়ে আনতে কাজ করবে।
প্রথম আলো: পি কে হালদারকে ফিরিয়ে আনতে দুদক কতটা আশাবাদী?
খুরশীদ: পি কে হালদারকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। তবে সময়ক্ষেপণ হতে পারে। ভারতে তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে তারা কী ব্যবস্থা নেয়, তার ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করছে। তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনতে তিন থেকে ছয় মাসের মতো সময় লাগতে পারে।