পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় গত সোমবার এক মাদ্রাসাছাত্রীকে (১৩) ধর্ষণ ও জামালপুরের মেলান্দহে গত বৃহস্পতিবার এক স্কুলছাত্রীকে (১৩) ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ করেছে তাদের পরিবার। উভয় ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার নদমূলা ইউনিয়নে মাদ্রাসাছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে তার বাবা একই উপজেলার একটি গ্রামের এক যুবক (১৮) ও আরেক গ্রামের বাসিন্দা সজল জমাদ্দারকে (৩০) আসামি করে থানায় মামলা করেন।
মামলা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার বেলা ১১টার দিকে মেয়েটি বাড়ি থেকে হেঁটে নানার বাড়িতে যাচ্ছিল। পথে একটি গ্রামের সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় পূর্বপরিচিত যুবকসহ ওই দুজন তার মুখ চেপে ধরে জোর করে সড়কের পাশে একটি পানের বরজে নিয়ে যান। এরপর দুজন মিলে তাকে ধর্ষণ করেন। লোকলজ্জা ও ভয়ে মেয়েটি প্রথমে এ ঘটনা পরিবারকে জানায়নি। কিন্তু পরে সে তার বাবার কাছে তা প্রকাশ করে। এরপর বাবা বাদী হয়ে স্থানীয় থানায় মামলা করেন।
মেয়েটির বাবা বলেন, ধর্ষণের ঘটনা জানার পর তিনি মামলা করার উদ্যোগ নিলে অভিযুক্ত দুজন তাঁর বড় ছেলেকে ডেকে ধর্ষণের ভিডিও চিত্র দেখিয়ে হুমকি দেন, মামলা করলে ওই ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়া হবে। এরপরও বিচারের দাবিতে তিনি মামলা করেছেন।
জানতে চাইলে ভান্ডারিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তারিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে অভিযুক্ত দুজনই পলাতক। তাঁদের গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর রয়েছে। গতকাল শুক্রবার পিরোজপুর সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে মেয়েটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ধর্ষণের ভিডিও চিত্র তাঁরা হাতে পাননি।
এদিকে, জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার একটি এলাকায় কোচিং শেষে বাড়িতে ফেরার পথে অষ্টম শ্রেণির স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ রাসেল খাঁ (২৫) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁর বাড়ি এই উপজেলার কম্পপুর উত্তরপাড়া গ্রামে।
তবে এ ঘটনায় মূল অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে, সেই নয়ন খাঁ (২০) পলাতক রয়েছেন। ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতেই স্কুলছাত্রীর মা বাদী হয়ে নয়ন খাঁ ও রাসেল খাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেন। গতকাল দুপুরে রাসেলকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
স্কুলছাত্রীর পরিবার, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের ভাষ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্কুলছাত্রী বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে একটি কোচিং সেন্টারে পড়তে যায়। পড়া শেষে বাড়ি ফেরার সময় রাস্তায় তার পিছু নেন নয়ন খাঁ ও তাঁর সহযোগী রাসেল খাঁ। একটি নির্জন স্থানে যাওয়ার পর তাঁরা ছাত্রীকে টেনেহিঁচড়ে একটি খেতে নিয়ে যান। এ সময় নয়ন খাঁ ধর্ষণের চেষ্টা করেন। স্কুলছাত্রী দুজনকেই ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে বাড়িতে ফেরে। পরে তার মাকে ঘটনা জানায়। মা প্রতিবেশীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে পালানোর সময় তাঁরা রাসেলকে ধরে ফেলেন। পরে পুলিশ এসে তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।
ওই ছাত্রীর মা বলেন, ‘ওই সব বখাটের অত্যাচারে মেয়েকে বাহিরে পাঠাতে ভয় লাগে। তাই বাড়ি থেকে বেশি দূরে নয়—এমন একটি কোচিং সেন্টারে মেয়েকে পড়তে পাঠানো হয়। তাতেও ওদের অত্যাচার থামেনি। মেয়েটা একরকম মারামারি করেই সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হয়েছে।’ মা আরও বলেন, তিনি এই বখাটেদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান, যাতে অন্যরাও একই ধরনের ঘটনা না ঘটাতে পারে।
এ ব্যাপারে মেলান্দহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাখাওয়াত হোসেন বলেন, একজনকে ঘটনার কিছুক্ষণ পরই গ্রেপ্তার করা হয়। নয়ন খাঁকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই তাঁকেও গ্রেপ্তার করা হবে।
আরও পড়ুন:
শিশুরাই বড় শিকার