পাঁচ বস্তা মুদ্রা, ৬১ কেজি সোনা

রাজধানীর পুরানা পল্টনের একটি বাসা থেকে গতকাল উদ্ধার করা সোনার বার এবং দেশি-বিদেশি মুদ্রা (বস্তার মধ্যে) l ছবি: প্রথম আলো
রাজধানীর পুরানা পল্টনের একটি বাসা থেকে গতকাল উদ্ধার করা সোনার বার এবং দেশি-বিদেশি মুদ্রা (বস্তার মধ্যে) l ছবি: প্রথম আলো

বালিশের কভার, সোফার কুশনের ভেতর, জাজিম-তোশকের নিচে, আলমারি ও বাসার ফলস (কৃত্রিম) ছাদের ওপর পাওয়া গেল পাঁচ বস্তা দেশি-বিদেশি মুদ্রা ও সোনার বার।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টনের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে শুল্ক গোয়েন্দারা এভাবে পাঁচ বস্তা দেশি-বিদেশি মুদ্রা ও ৬১ কেজি ওজনের ৫২৮টি সোনার বার উদ্ধার করেন। এর সঙ্গে জড়িত অভিযোগে মোহাম্মদ আলী (৫০) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। অভিযানে সহায়তা করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান সোনা ও মুদ্রা উদ্ধারের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, অধিদপ্তরে গোপন খবর আসে যে পুরানা পল্টনের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী বহুতল ভবনের ৬ তলা ও ১১ তলার নিজের ফ্ল্যাটে সোনা চোরাচালানের ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর শুল্ক গোয়েন্দারা ডিবির সহায়তা নিয়ে অভিযান চালান।
অভিযান পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানান, বিকেল পাঁচটার দিকে শুল্ক গোয়েন্দা ও ডিবি পুলিশ ওই বাসায় অভিযান চালায়। একই ভবনের ১১ তলায় তাঁর আরেকটি ফ্ল্যাটেও তল্লাশি চালানো হয়। তাঁরা ওই বাসার সোফার কুশন, বালিশের কভারের ভেতর, তোশক ও জাজিমের নিচে কাঁড়ি কাঁড়ি দেশি-বিদেশি মুদ্রা পান। একপর্যায়ে তাঁরা আলমারি ও শোয়ার ঘরের ফলস ছাদের ওপর থেকে প্রতিটি ১০ তোলা ওজনের ৫২৮টি সোনার বার উদ্ধার করেন। এসব সোনার বার ও দেশি-বিদেশি মুদ্রা পাঁচটি বস্তায় ঢোকানো হয়। রাত নয়টা পর্যন্ত এ অভিযান চলে।

রাজধানীর পুরানা পল্টনের একটি বাসা থেকে গতকাল উদ্ধার করা সোনার বার এবং দেশি-বিদেশি মুদ্রা (বস্তার মধ্যে) l ছবি: প্রথম আলো

রাত সাড়ে আটটায় অভিযান পরিচালনাকারী শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, উদ্ধার হওয়া মুদ্রার মধ্যে দেশীয়, সৌদি ও ভারতীয় মুদ্রা রয়েছে। উদ্ধার হওয়া সোনার পরিমাণ ৬১ কেজি, এর আনুমানিক মূল্য ৩০ কোটি টাকার বেশি। জিজ্ঞাসাবাদে মোহাম্মদ আলী গোয়েন্দাদের বলেন, ব্যাংকে রাখা নিরাপদ মনে না করায় তিনি সাড়ে চার কোটি টাকা ও ১৫ লাখ সৌদি মুদ্রা বাসায় রেখেছেন। রাত ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় মুদ্রা গণনার কাজ চলছিল।
অভিযানে অংশ নেওয়া ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, মোহাম্মদ আলী আবাসন নির্মাণপ্রতিষ্ঠান ও মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি রিহ্যাবের সদস্য নন। এসব টাকা বৈধভাবে তিনি আয় করেছেন। আর উদ্ধার হওয়া সোনা তাঁর এক বন্ধু তাঁকে রাখতে দিয়েছেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি যশোরের শেখপাড়ায়। কর্মকর্তারা বলেন, তাঁর অসংলগ্ন কথাবার্তায় তাঁরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন।
কর্মকর্তারা বলেন, মোহাম্মদ আলী কালো কাঁথায় মুড়িয়ে সোনার বারগুলো রেখেছিলেন। এর আগে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উদ্ধার হওয়া সোনার চোরাচালানের বারগুলো এভাবে উদ্ধার হয়েছে।
শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান বলেন, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোহাম্মদ আলী হুন্ডি ব্যবসায়ী। হুন্ডির আড়ালে তিনি মুদ্রা ও সোনা চোরাচালান ব্যবসা করে আসছিলেন। বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, বাসায় বিদেশি মুদ্রা রাখা যায় না। একই সঙ্গে ২০০ গ্রামের বেশি সোনা রাখা যাবে না। আর বৈধপথে আয় করলে এসব লুকিয়ে রাখা হয়েছিল কেন? উদ্ধার করা সোনার বৈধ কোনো কাগজপত্র আছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।