অধিক মুনাফা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নওগাঁয় একটি সমবায় সমিতির কর্মকর্তারা সদস্যদের পাঁচ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই সমিতির নাম সৃজনী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড। এই বিষয়ে সমিতির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গত ২৭ মে নুরুজ্জামান চৌধুরী নামের এক সদস্য নওগাঁ সদর থানায় মামলা করেছেন।
মামলার এজাহার ও ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১০ সাল থেকে ক্ষুদ্র পরিসরে ঋণ বিতরণ ও আমানত সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করেন নওগাঁ পৌরসভার খলিশাকুড়ি এলাকার বাসিন্দা আবদুর রশিদ ও তাঁর ছোট ভাই রাশেদুল ইসলাম। ২০১২ সালে সদর উপজেলা সমবায় কার্যালয় থেকে সৃজনী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি নামে সমিতিটির নিবন্ধন নেন আবদুর রশিদ। সমবায় সমিতিটির পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাঁর ছোট ভাই রাশেদুল ইসলাম ও প্রধান উপদেষ্টা দেলওয়ার হোসেন। এরপর সমিতির কার্যক্রম শুরু করেন আবদুর রশিদ।
মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগী কয়েকজন সদস্যের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নিবন্ধন নেওয়ার আগে থেকেই সমিতির কর্মকর্তারা অবৈধভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করেন। তাঁরা সদস্যের কাছ থেকে দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক ও বার্ষিক আমানত, স্থায়ী বিনিয়োগ, স্থায়ী আমানত ও ডিপিএসের নামে টাকা জমা রাখতে শুরু করেন। টাকা জমা নিয়ে সদস্যদের প্রতি মাসে মুনাফা দিতে থাকেন তাঁরা। ধীরে ধীরে সমিতির সদস্যসংখ্যা ও এর আমানতের পরিমাণ বাড়তে থাকে। নওগাঁ পৌরসভার খলিশাকুড়িতে প্রধান কার্যালয়সহ এই সমিতির তিনটি কার্যালয় রয়েছে। বাকি কার্যালয় দুটি বদলগাছি উপজেলার গোপরচাঁপাহাট ও মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়াহাটে। মাঠকর্মীদের মাধ্যমে সদস্যদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করত প্রতিষ্ঠানটি। তিনটি কার্যালয়ে তিন শতাধিক সদস্যের প্রায় পাঁচ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়। গত ২৫ মে থেকে প্রতিষ্ঠানটির সব কার্যালয়ে তালা দিয়ে উধাও হয়ে যান কর্মকর্তারা। তাঁদের মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
>
- নওগাঁর এই সমবায় সমিতির নাম সৃজনী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড
- ২০১২ সাল থেকে তারা ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাচ্ছে
মামলার বাদী ওই সমিতির সদস্য নুরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘সমিতিতে আমি, আমার মা, বোন ও খালার নামে প্রায় ২০ লাখ টাকা সঞ্চয় জমা রয়েছে। তাঁদের কথামতো ১৫ শতাংশ হারে মুনাফা পাওয়ার আশায় আমরা দুই বছর আগে ওই সব টাকা জমা দিই। শুরুতে ঠিকমতো মুনাফা দিলেও গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে তাঁরা মুনাফা দেওয়া বন্ধ করে দেন। টাকা ফেরত চাইলে নানা টালবাহানা শুরু করেন কর্মকর্তারা। সর্বশেষ গত বছরের নভেম্বরে আমানতকারীদের ডেকে রমজানের ঈদের আগে সবার টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তাঁরা। আমানত ফেরত দেওয়ার সময় চলে এসেছে। এখন দেখছি সমিতির কর্মকর্তারা কার্যালয়ে ও বাসায় তালা দিয়ে উধাও হয়ে গেছেন।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নওগাঁ পৌরসভার খলিশাকুড়ি, জাগৎসিংহপুর, ভবানীপুর, রজাকপুরসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ ওই সমিতিতে টাকা আমানত রেখেছেন। সমিতির বেশির ভাগ সদস্যই নারী।
গত ৩০ মে সকালে খলিশাকুড়ি এলাকায় বটতলী মোড়ে সৃজনী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। খলিশাকুড়ি এলাকায় অবস্থিত সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল ইসলামের বাড়িতেও তালা ঝুলতে দেখা যায়।
এই বিষয়ে কথা বলার জন্য আবদুর রশিদ ও রাশেদুলের মুঠোফোনে ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে এ বিষয়ে ওই সমিতির প্রধান উপদেষ্টা দেলওয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাকে নামেই সমিতির প্রধান উপদেষ্টা করে রেখেছে। কিন্তু আমি কোনো কিছুই করিনি। আমানতকারীরা টাকা ফেরত নিতে চাপ দিতে শুরু করলে গত বছরের নভেম্বর মাসে আমি আবদুর রশিদকে আমানতকারীদের সঙ্গে মিটিংয়ে বসার অনুরোধ করি। আমার কথামতো মিটিং আহ্বান করা হয় এবং ওই মিটিংয়ে রশিদ গ্রাহকদের কথা দেন রোজার ঈদের আগেই সবার টাকা ফেরত দেবেন। কিন্তু তিনি টাকা না দিয়ে পালিয়ে গেছেন।