কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড

পরীক্ষার ফল পরিবর্তন করে দেওয়ার প্রলোভন

কুমিল্লায় পরীক্ষার ফল পরিবর্তন ও বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের কাছে ফোন করছে প্রতারক চক্র। এতে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে টাকা চাওয়া হচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে প্রতিকার চেয়ে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আসাদুজ্জামান গত বুধবার পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে চিঠি দিয়েছেন। একই সঙ্গে বোর্ডের ওয়েবসাইটে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে এ ধরনের প্রতারক চক্র থেকে সতর্ক থাকার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের অনুরোধ করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বোর্ডের পাঁচজন কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শাখায় দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা আউটসোর্সিংয়ের (বাইরে থেকে) কাজ করছেন, তাঁদের মধ্যে সন্দেহভাজন কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রতারক চক্রের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। এখান থেকেই আগাম তথ্য পাচার হয়। এঁদের সঙ্গে প্রতারক চক্রের যোগসাজশ রয়েছে।

বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা এবং ফল প্রকাশের সময় ঘনিয়ে এলে সক্রিয় হয়ে ওঠে প্রতারক চক্র। কয়েক দিন ধরে একটি চক্র এ বোর্ডের অধীন কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের ফোন করছে। প্রতারকেরা সদ্য শেষ হওয়া এসএসসি পরীক্ষার ফল পরিবর্তন করে দেওয়ার কথা বলে মুঠোফোনে ব্যাংকিংয়ের প্রতিষ্ঠান বিকাশসহ নানা মাধ্যমে টাকা চাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রতারকেরা বোর্ডের কর্মকর্তাদের নাম ও পদবি ব্যবহার করছে। ফলে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিভ্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ অবস্থায় সতর্ক থাকার জন্য বোর্ডের চেয়ারম্যানের নির্দেশে তিনি এসপিকে চিঠি দিয়েছেন। একই সঙ্গে বোর্ডের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জ ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত আমার কাছে প্রতারক চক্র পরীক্ষার ফল পরিবর্তন করে দেবে বলে দফায় দফায় ফোন করে। এরই মধ্যে আমার কাছ থেকে কিছু টাকাও হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। পরে জানলাম বিষয়টি ভুয়া। আমি এর প্রতিকার চাই।’

শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এ ধরনের প্রতারণার সঙ্গে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের সম্পর্ক নেই। স্কুলের প্রধান শিক্ষক, কলেজের অধ্যক্ষদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য বলেছি।’

শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১ জুলাই পরীক্ষার ফল পরিবর্তন ও চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। একই সঙ্গে এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে তখনকার এসপি মো. শাহ আবিদ হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তখন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মুন্সীরহাট শাহাদাৎ মেমোরিয়াল ও নন্দনপুর উচ্চবিদ্যালয়ের দুই প্রধান শিক্ষক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেন। এতে তাঁরা চাকরি দেওয়ার কথা বলে জনৈক ব্যক্তি তাঁদের কাছে টাকা দাবি করে বলে উল্লেখ করেন। প্রতারক তাঁর পরিচয় হিসেবে বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলামের নাম ব্যবহার করেন। এর আগে এইচএসসি পরীক্ষার ফল পরিবর্তন করে দেওয়ার কথা বলে ২১ জুন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রুহুল আমিন ভূঁইয়ার নাম ব্যবহার করে প্রতারক চক্র। প্রতারকেরা এ নাম করে বরুড়া উপজেলার আগানগর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ শরীফুল ইসলামকে ফোন করে।

এ বিষয়ে শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৭ সাল থেকেই প্রতারক চক্র ঘুরেফিরে তিনটি মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করে প্রতারণা করে আসছে। আমরা বোর্ড থেকে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছি। এরপরেও নিত্যনতুন ধারণা নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের কাছে অর্থ দাবি করে আসছে একটি চক্র।’

জানতে চাইলে বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রুহুল আমিন ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রতারক চক্র আমাদের কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে টাকা দাবি করছে। এ বিষয়ে পুলিশকে জানানো হয়েছে।’

এ ব্যাপারে এসপি সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা সংশ্লিষ্ট থানার মাধ্যমে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। প্রতারক চক্রের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা হবে।’