নয়াপল্টনে বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলছে। এ সময় পুলিশের ছোড়া প্যালেট বুলেটে (ছররা গুলির মতো) কমপক্ষে ১২ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।

আজ বুধবার বেলা পৌনে একটার দিকে এই সংঘর্ষ বাধে বলে প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।

নয়াপল্টনে বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মী। ছবি: আবদুস সালাম

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করতে সরকার এ ঘটনা ঘটিয়েছে।’

বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা পুলিশের একটি পিকআপসহ দুটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। সেখানে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী একজনের ভাষ্য, হঠাৎ করে গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া যায়। এরপরই বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে।

পুলিশের গাড়ি জ্বলছে। ছবি: আবদুস সালাম

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা গেছে, সকাল থেকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ভিড় ছিল। পুলিশ রাস্তায় তাঁদের দাঁড়াতে দিচ্ছিল না। বেলা পৌনে একটার দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বড় একটি মিছিল নিয়ে ঢাকা-৮ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম কিনতে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আসেন। ওই সময় কার্যালয়ের সামনে থেকে তাঁর মিছিল সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে পুলিশের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। মুহূর্তে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ কয়েকজন কর্মী-সমর্থককে লাঠিপেটা করে। পুলিশের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। পুলিশ প্যালেট বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। তবে বিএনপির নেতা, কর্মী ও সমর্থক এত বেশি ছিলেন যে পুলিশ সেখান থেকে পিছু হটে।

পুলিশের পিকআপ জ্বলছে। ছবি: আবদুস সালাম

একপর্যায়ে নেতা-কর্মীরা পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেন। তাঁরা রাস্তায় চলাচল করা অন্যান্য ব্যক্তিগত গাড়িও ভাঙচুর করেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সেখানে সংঘর্ষ চলছিল।

সংঘর্ষের কারণে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে আশপাশের এলাকার সড়কে প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

সংঘর্ষের ঘটনায় আহত এক ব্যক্তি। ছবি: আরিফুজ্জামান

ঘটনাস্থলে পুলিশের জলকামান ও সাঁজোয়া যান মোতায়েন করা আছে।

বেলা পৌনে একটার দিকে সংঘর্ষ বাধে। ছবি: রোজিনা ইসলাম

তবে এখন পর্যন্ত সড়ক বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থকদের দখলে রয়েছে।

সংঘর্ষের ঘটনায় আহত একজন। ছবি: আরিফুজ্জামান

প্যালেট বুলেটে আহত ১২ জনকে শনাক্ত করা গেছে। তাঁরা হলেন পিরোজপুরের নেছারাবাদের মো. শামসুল হক, রাজধানীর মুগদার মেহেদি হাসান মিরাজ, অরিন, পল্টনের মো. কাদির, হৃদয় শেখ, মতিঝিলের মকবুল হোসেন, সবুজবাগের মনির হোসেন, খিলগাঁওয়ের মোস্তাক, কলাবাগানের সুমন, বিমানবন্দর থানা এলাকার মহিউদ্দিন রতন, মাদারীপুরের সাখাওয়াত হোসেন এবং পিরোজপুরের আসাদুজ্জামান। তাঁদের গলা, মাথা ও পিঠে গুলির আঘাত লেগেছে।

সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ এক ব্যক্তি। ছবি: আরিফুজ্জামান

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের মতে, আরও অনেকে গুলিতে আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

হাতের তালুতে গুলি দেখাচ্ছেন এক ব্যক্তি। ছবি: আরিফুজ্জামান

এ ঘটনায় সরকারের সমালোচনা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বেলা পৌনে দুইটার দিকে ফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে সরকার। আওয়ামী লীগ শোডাউন করল, এত কিছু করল, কিছু হলো না। আজ বিএনপির নেতা-কর্মীদের কেন সরিয়ে দেওয়া হলো?’

সড়কে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। ছবি: আবদুস সালাম
বিক্ষোভ মিছিল করছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। ছবি: আবদুস সালাম
বিক্ষোভ মিছিল করছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। ছবি: আবদুস সালাম
নয়াপল্টনে কথা বলছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ছবি: আবদুস সালাম