তারা ১১ জন। বয়স ৬ থেকে ১৫। কারও মা নেই, কারও বাবা নেই। বস্তিতে জন্ম তাদের। কারও মা মানুষের বাসায় কাজ করেন। বাবা থাকলেও খবর নেন না। মা-বাবার আদর স্নেহে বেড়ে ওঠার কথা থাকলেও এই বয়সে তারা রাস্তায় বেড়ে উঠছে। করছে নেশা। আর টাকা জোগাড়ের জন্য জড়িয়ে পড়ছে চুরিতে। নগরের আকবরশাহ থানার এ কে খান এলাকা থেকে ১১ শিশুকে আটকের পর পুলিশ এসব তথ্য জানতে পারে। তাদের কাছ থেকে চুরি করা বেশ কিছু মালামাল উদ্ধার করা হয়।
১১ বছর বয়সী এক শিশুর সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার কথা হয় প্রথম আলোর। সে জানায়, তার মা-বাবা নেই। সারা দিন ঘোরাঘুরি করে। আর রাতে রাস্তার পাশে ঘুমায়। তার মতো অনেকেই আছে। অন্যরা নেশা করে, তাই সেও করে। ৩০ টাকায় জুতার লাগানোর ঘাম কিনে নেন। পরে এগুলো পলিথিনের মধ্যে দিয়ে ফুলিয়ে ঘ্রাণ নেয়। অনেকে গাঁজাও খায়। এসব কিনতে টাকার জন্য তারা চুরি করে। বিশেষ করে বিভিন্ন মালামালবাহী ট্রাকের পেছনে ওঠে কিছু মালামাল নিয়ে দ্রুত নেমে পড়ে। যানজটে আটকা পড়লে গাড়ির গতি যখন কিছুটা কম থাকে তখনই তাদের একজন উঠে যায়।
১৫ বছর বয়সী আরেক শিশু জানায়, তার বাবা গাড়িচালক। মা মানুষের বাসায় কাজ করেন। রাস্তায় বন্ধুদের সঙ্গে থাকতে তার ভালো লাগে তাই থাকে। মা নিতে আসলেও যায় না। বাবা খবর নেন না। নেশা করতে ভালো লাগে তাই রাস্তায় বন্ধুদের সঙ্গে থাকে।
পুলিশ সূত্র জানায়, নগরের এ কে খান এলাকা দিয়ে সারা দেশ থেকে পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান চট্টগ্রাম বন্দরে আসা–যাওয়া করে। ওই এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। এই সুযোগে পথশিশুরা গাড়িতে দ্রুত মালামাল নিয়ে সটকে পড়ে।
৬ বছর বয়সী এক শিশুর মা মুঠোফোনে বলেন, ‘বিয়ের পর তার স্বামী তাঁকে ছেড়ে চলে যান। এরপর আর খোঁজ পাননি। ছেলেকে বস্তিতে রেখে মানুষের বাসায় কাজে যান। বছরখানেক আগে ছেলে বস্তির অন্য শিশুদের সঙ্গে মিশে রাস্তায় চলে যায়। অনেক চেষ্টা করেও তাকে বাসায় নেওয়া যাচ্ছে না। নিজে খাইতে পারি না। এ জন্য ছেলের কথাও ভাবতে পারি না। তারপরও ছেলে যদি পড়ালেখা করতে চায় শেখাবেন।’
আকবরশাহ থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, পথশিশুদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পণ্যবাহী ট্রাক থেকে মালামাল চুরি করার অহরহ অভিযোগ রয়েছে। নেশার টাকার জন্য তারা এই চুরি করে। এ ছাড়া মাদক পাচারে এসব শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই পুলিশ এ কে খান মোড় থেকে ১১ শিশুকে আটক করে। পরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাদের শিশু বিকাশ কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেন। সেখানে তারা ভালোভাবে বেড়ে উঠবে। সুযোগ পেলে কয়েকজন শিশু ভালো হওয়ারও ইচ্ছে প্রকাশ করেছে।
চট্টগ্রাম জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা নার্গিস সুলতানা বলেন, ১১ শিশুকে নগরের হামজারবাগে সরকারি শিশু বিকাশ কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। তারা যাতে ভালোভাবে বেড়ে উঠবে সেই চেষ্টায় রয়েছে। কিন্তু শিশুগুলো আবার রাস্তায় বেরিয়ে যেতে চায়। কয়েক দিনের মধে৵ তাদের ফরহাদাবাদ শেখ রাসেল দুস্থ শিশু কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে।