কুমিল্লা দক্ষিণ ও উত্তর জেলা এবং মহানগর জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সভা উপলক্ষে গতকাল শনিবার দফায় দফায় মারধরের ঘটনা ঘটেছে। দুপুরে কুমিল্লা টাউন হল মিলনায়তনে, টাউন হল মাঠে ও কুমিল্লা সার্কিট হাউসে এই ঘটনা ঘটে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সাংগঠনিক সভা শুরু হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এস এম ফয়সল চিশতী, সংরক্ষিত মহিলা সাংসদ ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রওশন আরা মান্নান, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এয়ার আহম্মেদ সেলিম, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মিলন, কুমিল্লা উত্তর জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি লুত্ফুর রেজা ও সাধারণ সম্পাদক মো. আমির হোসেন ভূঁইয়া।
সভা শুরুর পর মঞ্চে বসা নিয়ে প্রথমে হট্টগোল শুরু হয়। এরপর বক্তব্য দেওয়া নিয়ে ঝামেলা হয়। একপর্যায়ে সভার প্রধান অতিথি কাজী ফিরোজ রশীদ মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলেন, ‘আমরা আজকে কমিটি গঠন করতে আসিনি। ঢাকায় গিয়ে কমিটির কথা বলব। আমরা জানতে এসেছি কোন উপজেলায় জাতীয় পার্টির কী অবস্থা? এখানে কোনো কমিটি হবে না। কোনো কমিটি বিলুপ্তও হবে না। এখানে জেলা নেতারা কোনো বক্তৃতা দেবেন না। কেবল ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন।’ কিন্তু এতেও পরিস্থিতি শান্ত হয়নি। মঞ্চের দ্বিতীয় সারিতে বসা কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সালামত আলী খান একই কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কবিরকে ঘুষি মারেন। তখন মঞ্চে থাকা পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়। এরপর কুমিল্লা উত্তর জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ মো. আমির হোসেন ভূঁইয়ার নাম ধন্যবাদ জ্ঞাপন করার জন্য ঘোষণা দেওয়া হয়। তখন কুমিল্লা উত্তর জেলা জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা দাঁড়িয়ে হট্টগোল করেন। কয়েকজন কর্মী মঞ্চের কাছে গিয়ে তাঁকে মারার জন্য তেড়ে আসেন। পরে পুলিশ এসে সামাল দেয়। কিন্তু দুই মিনিট কথা বলার পর তাঁর কাছ থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নেওয়া হয়।
পরে কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তৃতা দেন। এ সময় দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর জাতীয় পার্টির সভাপতি এস এম ফয়সল চিশতী বলেন, ‘আজকের এই সভায় কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কাজী ফিরোজ রশীদের সামনে কুমিল্লাকে আমরা বেইজ্জতি করেছি।’
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘ঢাকায় গিয়ে আজকের এই সভার পরিপূর্ণ প্রতিবেদন দেব। তিনটি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করে দেব।’
বেলা দেড়টার দিকে সভা শেষ হয়। নেতা-কর্মীরা টাউন হল মিলনায়তন থেকে বের হচ্ছিলেন। তখন কুমিল্লা উত্তর জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. আমির হোসেন ভূঁইয়া ও কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি ও মেঘনা) আসনের জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচন করা মাখন সরকারের অনুসারীদের মধ্যে প্রথমে হাতাহাতি ও পরে কিলঘুষির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে পুলিশ কয়েকজনকে পিটুনি দেয় ও আটক করে। এ সময় মাখন সরকারকে লাঞ্ছিত করা হয়।
বেলা দুইটার দিকে কুমিল্লা সার্কিট হাউসের দ্বিতীয়তলায় দাউদকান্দির মাখন সরকারের নেতৃত্বে তাঁর লোকজন সাবেক সাংসদ আমির হোসেনকে লাঞ্ছিত করেন। পরে আমির হোসেনের অনুসারী ও পুলিশ টেনেহিঁচড়ে মাখন সরকারকে সার্কিট হাউসের নিচে নামিয়ে আনেন। এই সময় তাঁর কয়েকজন নেতা-কর্মী মারধরের শিকার হন।
মাখন সরকার বলেন, ‘আমির হোসেনের লোকজন আমার নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও মারধর করেন। আমাকে লাঞ্ছিত করেছেন।’ অভিযোগ প্রসঙ্গে সাবেক সাংসদ আমির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘মাখনের লোকজন আমার ওপর অযথা ক্ষিপ্ত হন।’