বগুড়া শহরে এক কিশোরী (১৪) গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। এ ঘটনায় পুলিশ গৃহকর্তাকে আটক করেছে। অসুস্থ কিশোরী শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
রোববার ওই কিশোরী ঘরে থাকা বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। মারধরের পাশাপাশি গৃহকর্ত্রী ওই কিশোরীর চুল কেটে দিয়েছেন। বিষয়গুলো পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন আটক ব্যক্তি। এ ঘটনায় গৃহকর্ত্রী রোখসানা বেগম পলাতক।
আটক গৃহকর্তার নাম আবদুর রাজ্জাক (৬৫)। তিনি টিঅ্যান্ডটির অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী। তাঁর বাড়ি বগুড়া শহরের জবানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়–সংলগ্ন ঠনঠনিয়া দক্ষিণপাড়ায়। গৃহকর্মী কিশোরীকে শিশু অবস্থায় ওই ব্যক্তি টাকার বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন বলে পুলিশের কাছে দাবি করেন। শিশুটি তার মা-বাবার পরিচয় জানে না।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আবদুর রাজ্জাকের বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করত মেয়েটি। রোববার তাকে নির্যাতনের পর চুল কেটে দেওয়া হয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে বিকেলের দিকে মেয়েটি ওই ঘরে থাকা ইঁদুরের বিষ খায়। পরে ওই দিন সন্ধ্যায় মেয়েটিকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর গৃহকর্তা আবদুর রাজ্জাক গা ঢাকা দেন।
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক আবদুল আজিজ বলেন, ‘খবর পেয়ে রোববার রাত ১২টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাধীন মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, নির্যাতনের পর তার মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়েছে। বাবা-মায়ের পরিচয়ও তার জানা নেই। ভর্তি রেজিস্টারে দেওয়া মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে আবদুর রাজ্জাককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়।’
সোমবার বিকেলে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের মহিলা ওয়ার্ডে গিয়ে কথা হয় মেয়েটির সঙ্গে। সে তার মা–বাবা মায়ের নাম-পরিচয়, জন্ম-ঠিকানা কিছুই জানে না। তবে ছোটবেলা থেকে গৃহকর্তা (আবদুর রাজ্জাক) ও গৃহকর্ত্রী (রোখসানা বেগম) তাকে একটি নামে ডাকেন। কিশোরীর অভিযোগ, সারাক্ষণ তাকে বাসায় নানা কাজে ব্যস্ত রাখা হতো। হাঁপিয়ে উঠলে মারধর করা হতো। রোববার (১৫ ডিসেম্বর) মারধরের পর তার চুল কেটে দেন গৃহকর্ত্রী। পরে বিষ খেলে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
পুলিশের হেফাজতে থাকা আবদুর রাজ্জাক মেয়েটিকে মারধর ও চুল কেটে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘শাসন করতে গিয়ে দু-একটা মেরেছি। আমার স্ত্রী ওর চুল কেটেছে।’
তাঁর ভাষ্য, ৯ বছর আগে তাঁর কর্মস্থল ছিল রংপুরে। ওই সময় ১০০ টাকার বিনিময়ে পাঁচ বছর বয়সের সময় মেয়েটির দাদি ও ফুফু তাকে রংপুরের কাউনিয়া বাজারে তাঁর হাতে তুলে দিয়েছিলেন। মেয়েটির মা–বাবার পরিচয়, নাম–ঠিকানা কিছুই জানা নেই।
বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, মেয়েটির মুখ থেকে নির্যাতন ও চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ পেয়ে আবদুর রাজ্জাককে আটক করা হয়েছে। তাকে নিয়মিত নির্যাতন করা হতো বলে মেয়েটি জানিয়েছে। এ কারণে আবদুর রাজ্জাক এবং তাঁর স্ত্রী রোখসানা বেগমের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের শিশু আইনের (সংশোধিত ২০১৮) ৭০ ধারায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। মামলার বাদী হচ্ছেন একজন মানবাধিকার কর্মী। মেয়েটিকে মঙ্গলবার আদালতে হাজির করা হবে। শিশুটিকে সেফ হোম বা নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়ার বিষয়টি আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আবদুল ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, মেয়েটি এখন শঙ্কামুক্ত। সে কী ধরনের বিষ পান করেছিল সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য এর রাসায়নিক নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।