ভাড়া করা গাড়ি নিজের বলে দাবি করতেন। গাড়িতে দু-একজন চাকরিপ্রার্থীকে নিয়ে সরকারি বিভিন্ন অফিসের সামনে গিয়ে নামতেন। এরপর অফিসের ভেতরে গিয়ে কিছুক্ষণ পর বের হয়ে আসতেন। এভাবে চাকরিপ্রার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের আস্থা অর্জন করতেন প্রতারক হেলালউদ্দিন (৫১)। পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ভুয়া নিয়োগপত্র তুলে দিয়ে ৫ বছরে ৫০ জনের কাছ থেকে অন্তত ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি ও তাঁর তিন সহযোগী।
আজ বুধবার রাজধানীর টিকাটুলিতে র্যাব-৩–এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতারক চক্র সম্পর্কে এসব তথ্য দেওয়া হয়। র্যাব-৩–এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য তুলে ধরেন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর মিরপুর ও মতিঝিলে অভিযান চালিয়ে এ চক্রের মূল হোতা হেলাল ও তাঁর তিন সহযোগীকে আটক করা হয়। আটক অন্যরা হলেন হেলালের সহযোগী মফিজুল ইসলাম ওরফে লেবু (৪৭), খন্দকার মারুফ (৩৭) ও আবদুল কাদের ওরফে রাজু (২৯)। তাঁদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ভুয়া নিয়োগপত্র, জাল অফিস আদেশ ও সিল উদ্ধার করা হয়েছে।
লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, জালিয়াত চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অসহায় মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন বলে তথ্য পায় র্যাব-৩। এরপর তাঁদের আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়।
আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, আটক প্রতারকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, চক্রের হোতা হেলাল নিজেকে কোথাও মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), কোথাও উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। চাকরিপ্রার্থীদের চতুরতার সঙ্গে কথার জালে ফাঁসিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন তিনি।
আরিফ মহিউদ্দিন আরও বলেন, বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া দুই কোটি টাকা হেলাল চক্রের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেন। চাকরিপ্রার্থী প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩ থেকে ৯ লাখ টাকা পর্যন্ত নিতেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আটক মফিজুল ও কাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চল; বিশেষ করে লালমনিরহাট, বগুড়া, কুমিল্লা থেকে চাকরিপ্রার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের হেলালের কাছে নিয়ে আসতেন। হেলাল বস সেজে তাদের সাক্ষাৎকার নিতেন।
পরে হেলাল ভাড়া করা গাড়ি নিজের গাড়ি বলে দাবি করে তাতে দু-একজন চাকরিপ্রার্থীকে নিয়ে সরকারি বিভিন্ন অফিসের সামনে গিয়ে নামতেন। এ সময় হেলাল গাড়ি থেকে নেমে অফিসের ভেতরে যেতেন এবং কিছুক্ষণ পর বের হয়ে আসতেন। এভাবে চাকরিপ্রার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের আস্থা অর্জন করতেন।
এই র্যাব কর্মকর্তা জানান, হেলাল বিভিন্ন সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ সিলমোহর ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভুয়া স্বাক্ষর সংবলিত বিভিন্ন অফিস আদেশ ও ভুয়া নিয়োগপত্র খামে ভরে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তা চাকরিপ্রার্থীদের হাতে ধরিয়ে দিতেন।
র্যাব কর্মকর্তা আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, হেলাল প্রথমে চাকরি হওয়ার পর টাকা নেওয়ার কথা বলতেন। কিন্তু পরে বিভিন্ন অজুহাতে চাকরিপ্রার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিতেন। ভুয়া নিয়োগপত্র দেওয়ার আগের রাতে হেলাল চাকরি নিশ্চিত করার কথা বলে আরও টাকা চাইতেন। এতে চাকরিপ্রার্থীরা অগ্রিম টাকা দিতে বাধ্য হতেন। এ কাজে সহযোগী মারুফের সহায়তা নিতেন হেলাল।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হেলাল বগুড়ার একটি কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করেছেন। তাঁর সহযোগী খন্দকার মারুফ এইচএসসি পাশ। মারুফ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নেতা, সরকারি কর্মকর্তা ও একটি বিশেষ অঞ্চলের বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম ব্যবহার করে চাকরিপ্রার্থীদের আস্থা অর্জন ও চক্রের হোতা হেলালকে সহায়তা করতেন।
এ ছাড়া আটক মফিজুল এসএসসি পাশ। তিনি কুড়িগ্রামের উলিপুর থানার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য। আর আবদুল কাদের একটি বেসরকারি পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপ্লোমা পাশ করেন। আটক ব্যক্তিদের কোনো দৃশ্যমান পেশা নেই। প্রতারণা ও জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাৎই তাঁদের কাজ বলে জানায় র্যাব।