নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ভিডিও চিত্র ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামি শামছুদ্দিন সুমনের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আদালতের নির্দেশে নির্যাতনের ওই ঘটনায় জড়িত দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেনকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, নির্যাতনের ঘটনায় হওয়া মামলার এজাহারভুক্ত ৬ নম্বর আসামি শামছুদ্দিন সুমনকে (৩৯) মঙ্গলবার দুপুরে নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাঁকে সাত দিনের রিমান্ড নেওয়ার আবেদন জানান। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাশফিকুল হক চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে একই আদালতে মঙ্গলবার দুপুরে নারী নির্যাতন মামলার আসামি ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিন আবেদন করা হয়। বিচারক তা নাকচ করে দিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই নোয়াখালীর পরিদর্শক মামুনুর রশীদ পাটোয়ারী আসামি দেলোয়ার হোসেনকে নির্যাতনের মামলায় এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণের মামলায় ‘শ্যোন অ্যারেস্ট’ দেখানোর আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক দেলোয়ারকে মামলা দুটিতে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। পরে আদালতের আদালতের আদেশে দেলোয়ার হোসেনকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, নির্যাতন মামলার ৩ নম্বর আসামি আবুল কালামকে মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে হাজির করা হয়েছে। বিকেলে ১৬৪ ধারায় আদালতে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে পারেন।
গত ২ সেপ্টেম্বর ঘরে ঢুকে স্বামীকে বেঁধে রেখে ৩৭ বছরের নারীকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণের চেষ্টা করেন বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর এলাকার দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যরা। তাঁরা ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্মম নির্যাতনের ভিডিও চিত্র ধারণ করে রাখেন। পরে ওই নারীকে হামলাকারীরা কুপ্রস্তাব দেন। তিনি তাতে রাজি না হওয়ায় তাঁরা ধারণ করা ভিডিও চিত্র ৪ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করলে তা ভাইরাল হয়। এতে ঘটনাটি জানাজানি হয় এবং সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
এরপর জেলা পুলিশ ওই দিন সন্ধ্যায় (৪ অক্টোবর) জেলা শহরের মাইজদী হাউজিং এলাকার একটি বাসা থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করে। পরে রাতে ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার, সহযোগী নুর হোসেন ওরফে বাদলসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৭-৮ জনকে আসামি করে থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন।
দুই মামলায় পুলিশ, র্যাব ও পিবিআই এ পর্যন্ত ১১ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে এ পর্যন্ত ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে নারী নির্যাতন মামলার চার আসামি আবদুর রহিম ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন, আনোয়ার হোসেন ওরফে সোহাগ (২১) ও নুর হোসেন ওরফে রাসেল (৩০) পৃথক আদালতে ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।