রোগীর শরীর থেকে কিডনি অপসারণের অভিযোগ

নাটোরে তিন চিকিৎসকসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা

রোগীর শরীর থেকে কিডনি অপসারণের অভিযোগে তিন চিকিৎসকসহ একটি বেসরকারি হাসপাতালের পরিচালকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। রোগীর স্বামী গতকাল বুধবার দুপুরে নাটোরের সিংড়ার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে এ মামলা করেন। আদালত আগামী সোমবার রোগীকে চিকিৎসার কাগজপত্রসহ সশরীরে হাজির হতে বলেছেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, বাদী সিংড়ার ছোট চৌগ্রামের সাজ্জাদ আলীর ছেলে ফজলু বিশ্বাস। তাঁর স্ত্রী মোছা. আছমা (৫০) পেটে ব্যথা নিয়ে ২০১৫ সালের ১২ জুন নাটোর শহরের জনসেবা হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক আশিকুর রহমান জানান, রোগীর দুটি কিডনি স্বাভাবিক। তবে মূত্রথলির কিছু সমস্যা রয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে ওই দিন ওই হাসপাতালে কর্তব্যরত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (সার্জারি) এম এ হান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি মূত্রথলিতে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। পরে রাতে তিনি নিজে রোগীর অস্ত্রোপচার করেন। সাত দিন হাসপাতালে থাকার পর গত ১৯ জুন ছাড়া পান রোগী আছমা। কিন্তু এরপরও সুস্থ না হওয়ায় ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি আবারও মোছা. আছমাকে জনসেবা হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই দিন হাসপাতালে দায়িত্বরত সনোলজিস্ট এ বি সিদ্দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন, আছমার ডান কিডনি নেই। তবে বাঁ কিডনি স্বাভাবিক আছে। এ কথা শোনার পর রোগী ও তাঁর স্বজনেরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। তাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি আছমার অস্ত্রোপচারের সময় ডা. হান্নানের সঙ্গে থাকা হাসপাতালের অপর চিকিৎসক আমিরুল ইসলামকে জানান। কিডনি না থাকার বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে আছমাকে নাটোরের আইডিয়াল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেন তাঁর আত্মীয়স্বজন। সেখানে চিকিৎসক আবদুস সামাদের করা সনোগ্রাফি থেকেও আছমার কিডনি নেই বলে জানা যায়। গত ৩ ফেব্রুয়ারি রোগী ও তাঁর স্বজনেরা জনসেবা হাসপাতালে গিয়ে ডা. হান্নানের কাছে কিডনি অপসারণের কৈফিয়ত দাবি করলে তাঁদের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যাপক বচসা হয়। একপর্যায়ে নাটোর সদর থানা-পুলিশ এসে ডা. হান্নানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরে রাতেই সিভিল সার্জনের পক্ষে সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আবুল কালাম আজাদের জিম্মায় ডা. হান্নানকে পুলিশ মুক্তি দেয়। তবে শর্তগুলো ছিল, তিন দিনের মধ্যে রোগীর উন্নত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো ও কিডনি না থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া। শর্তানুযায়ী ৪ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিমিটেডে রোগীর উন্নত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। সেখান থেকেও রোগীর ডান কিডনি দৃশ্যমান নয় বলে প্রতিবেদন দেওয়া হয়।

মামলায় বাদী আরও অভিযোগ করেন, একাধিক পরীক্ষায় ডান কিডনি না থাকার ব্যাপারে একই প্রতিবেদন পাওয়ায় তাঁরা ধারণা করছেন, অস্ত্রোপচারকারী ডা. হান্নান, আমিরুল, হালদার ও জনসেবা হাসপাতালের পরিচালক রফিকুল ইসলাম পূর্বপরিকল্পিতভাবে অসৎ উদ্দেশ্যে রোগীর শরীর থেকে ডান কিডনিটি অপসারণ করেছেন।

আদালতের একজন পেশকার বলেন, আদালত আগামী সোমবার বাদীকে রোগীসহ আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন। ওই দিন তাঁদের চিকিৎসার মূল কাগজপত্রও দাখিল করতে বলা হয়েছে।

এদিকে এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য জনসেবা হাসপাতালের পরিচালক রফিকুলের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। আর মামলার আসামি তিন চিকিৎসকের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ডা. হান্নান তাঁর ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, অভিযোগের ব্যাপারে তিনি মর্মাহত। তিনি বলেন, রোগীরা চিকিৎসা নিতে তাঁর কাছে যান। অথচ বিচার দেন সাংবাদিকের কাছে। সাংবাদিকেরা তাতে রং লাগিয়ে প্রচার করেন। তিনি সেখানে আরও বলেন, ওই রোগীর কিডনি ও মূত্রনালি থেকে পাথর অপারেশন করা হয়েছে। কিডনি অপসারণ করা হয়নি। পরে হয়তো ওই রোগীর একটা কিডনি ছোট হয়ে গেছে। তাই সনোগ্রাফিতে দেখা যাচ্ছে না। এ সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত ধারণা না থাকায় রোগীর লোকজন মিথ্যা অভিযোগ করছেন।