নর্দমার ওপরে দোকান সাবেক কাউন্সিলরের পরিবারের

নর্দমা দখল করে দোকানঘর। বৃহস্পতিবার সিলেট নগরের পুরানলেন এলাকায়। প্রথম আলো
নর্দমা দখল করে দোকানঘর। বৃহস্পতিবার সিলেট নগরের পুরানলেন এলাকায়।  প্রথম আলো

সিলেট সিটি করপোরেশনের নর্দমার ওপর দোকানঘর নির্মাণ করে প্রায় ১৫ বছর ধরে ভাড়া তুলে আসছেন সাবেক এক ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ভাই। সম্প্রতি সিটি কর্তৃপক্ষ ওই এলাকায় নর্দমা নির্মাণের কাজ শুরুর পর বিষয়টি দৃশ্যমান হয়েছে।

বর্তমানে দোকানঘরটির দায়িত্বে আছেন খলিলুর রহমান। তিনি সিলেট সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মুজিবুর রহমানের ভাই। মুজিবুরের দাবি, দোকানঘরটি তাঁদের প্রয়াত বড় ভাই আজিজুর রহমানকে দান করেছিল সিলেট পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘সিলেট পৌরসভা থাকাকালীন সবার সম্মতিতে আমাদের বড় ভাই আজিজুর রহমানের নামে দোকানঘরটি দান করা হয়েছিল। এটির কাগজপত্র আমাদের কাছে রয়েছে। আমরা নিয়মিতই বিভিন্ন ফি সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে দিয়ে আসছি।’

মুজিবুর রহমান টানা দুই মেয়াদে সিলেট সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। তবে ২০১৩ সালের পর নির্বাচনে অংশ নিলেও তিনি আর জয়ী হতে পারেননি। ওই দোকানঘরের অবস্থান নগরের বন্দরবাজার-জিন্দাবাজার সড়কের পুরান লেন মহল্লার প্রবেশমুখে।

সরেজমিনে দেখা যায়, পুরান লেন এলাকায় বন্দরবাজার-জিন্দাবাজার মূল সড়কে আশা ইলেকট্রনিকস নামের একটি দোকান। প্রায় এক মাস ধরে ওই এলাকায় সিলেট সিটি করপোরেশন নর্দমার নির্মাণকাজ করছে। নর্দমার একটি অংশ ওই দোকানের নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, ওই দোকানটি নর্দমার ওপরই নির্মাণ করা হয়েছে।

দোকানের পরিচালক বলেন, দোকানটি সিটি করপোরেশনের নর্দমার ওপরে নির্মাণ করা কি না সেটি তিনি জানেন না। তিনি দোকানটি বেশ কয়েক বছর আগে ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করে আসছেন। সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুজিবুর রহমানের ছোট ভাই খলিলুর রহমান দোকানটি তাঁর কাছে ভাড়া দিয়েছেন। প্রতি মাসে তিনি এসে ভাড়া নিয়ে যান।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও মহল্লার একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খলিলুর রহমান প্রায় ১৫ বছর আগে দোকানঘরটি নির্মাণ করেন। ওই দোকানটির কারণে মহল্লায় বড় কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে পারে না। এলাকায় সাবেক কাউন্সিলরের পরিবারের প্রভাব রয়েছে। এ কারণে কেউই তাঁদের বিরুদ্ধে কথা বলেন না। কাউন্সিলরের পরিবার দোকানটি নিজেদের জায়গায় তৈরি করেছেন বলে প্রায়ই এলাকায় বলে থাকেন।

যোগাযোগ করলে গত বুধবার খলিলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এখন নর্দমার কাজ করা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে হয়তো দোকানের অংশে এই কাজ করা হবে। এ কথা বলেই তিনি মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন। পরে আবারও ফোন দেওয়া হলে তিনি এ বিষয়ে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞেস করতে বলেন।

সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলরের পরিবার দাবি করছে দোকানের অংশটি সিলেট পৌরসভা থাকার সময়ে তাদের দান করা হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা একটি আবেদনও দিয়েছে। নর্দমার ওপর দোকান নির্মাণ করে কেউ ভাড়া দিতে পারেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমরা দেখছি। অনেকে সড়ক প্রশস্ত করতে নিজের বাড়িঘরের জায়গা পর্যন্ত ছেড়ে দিচ্ছেন। এটি সিটি করপোরেশনেরই জায়গা।’