গত ফেব্রুয়ারিতে একটি মামলায় শাহীনকে গ্রেপ্তার করেছিল নরসিংদী মডেল থানার পুলিশ। ৬ মাস কারাগারে থাকার পর কিছুদিন আগে তিনি জামিনে ছাড়া পান। ছাড়া পেয়েই আবার হত্যাকাণ্ডে জড়ালেন তিনি।
নরসিংদী শহরের খালপাড় এলাকায় পাওনা টাকার দ্বন্দ্বে আমির হোসেন (৪০) নামের এক ব্যক্তিকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। নিহতের ছোট বোন ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মোমেলা বেগম রোববার রাতে বাদী হয়ে শাহীন মোল্লা ওরফে পেটকাটা শাহীনকে (৩৭) আসামি করে মামলাটি করেন।
সোমবার সকালে এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার দত্ত চৌধুরী।
এর আগে রোববার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন খালপাড় এলাকার একটি সুপার শপের সামনে আমির হোসেনকে পাওনা টাকা দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে নরসিংদীর রায়পুরার রাজনগর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রসহ শাহীন মোল্লা ওরফে পেটকাটা শাহীন নামের একজনকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল।
নিহত ও হত্যাকারী পরস্পরের বন্ধু। মূলত ডাকাতির টাকা ভাগাভাগি নিয়েই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।বিপ্লব কুমার দত্ত চৌধুরী, ওসি, নরসিংদী মডেল থানা
আটক শাহীন জেলার রায়পুরা উপজেলার আড়ালিয়ার রাজনগর গ্রামের খোরশেদ মোল্লার ছেলে এবং নরসিংদী শহরের খালপাড় এলাকায় থাকতেন। অন্যদিকে নিহত আমির হোসেন সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের সংগীতা এলাকার ফাইজুদ্দিনের ছেলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারিতে একটি মামলায় শাহীন মোল্লা ওরফে পেটকাটা শাহীনকে গ্রেপ্তার করেছিল নরসিংদী মডেল থানার পুলিশ। ৬ মাস কারাগারে থাকার পর কিছুদিন আগে তিনি জামিনে ছাড়া পান। ছাড়া পেয়েই আবার হত্যাকাণ্ডে জড়ালেন তিনি।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আমির হোসেন কখনো মাছের ব্যবসা করতেন, আবার কখনো সিএনজি বা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালাতেন। ১৮ আগস্ট আমির হোসেনের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা ধার নেন শাহীন। ওই টাকা দ্রুত ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও তা ফেরত দিচ্ছিলেন না শাহীন। এ নিয়ে আমির হোসেনের সঙ্গে শাহীনের বিরোধ চলছিল। রোববার ভোরে টাকার জন্য শাহীনকে ফোন দিলে তাঁর সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় আমিরের। পরে শাহীন ৪০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আমিরকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান। শহরের খালপাড় এলাকার একটি সুপার শপের সামনে তাঁকে গুলি করে পালিয়ে যান শাহীন। ঘটনাস্থলেই আমিরের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এই ঘটনায় জেলা পুলিশের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আমিরকে ফোনে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে শাহীন। ঘটনার পরপরই আসামিকে গ্রেপ্তারে মাঠে নামে পুলিশ। রোববার দুপুরেই জেলা গোয়েন্দা শাখা ও মডেল থানা-পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে রায়পুরার রাজনগরের বাড়ি থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তল ও ম্যাগাজিনসহ শাহীনকে আটক করে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, শাহীন ও আমিরসহ একটি দল দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে আসছিলেন। ডাকাতির টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বে আমিরকে গুলি করে হত্যা করেন শাহীন। শাহীনের বিরুদ্ধে তিন থানায় ডাকাতি, ডাকাতির প্রস্তুতি ও অস্ত্র আইনে পাঁচটি মামলা আছে। নতুন করে হত্যা ও অস্ত্র আইনে আরও দুটি মামলা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
মামলার বাদী ও নিহতের ছোট বোন মোমেলা বেগম ভাই হত্যার সর্বোচ্চ বিচার দাবি করেন।
নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার দত্ত চৌধুরী বলেন, নিহত ও হত্যাকারী পরস্পরের বন্ধু। মূলত ডাকাতির টাকা ভাগাভাগি নিয়েই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আটক শাহীকে নিহতের বোনের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহীন হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। তাঁকে আদালতে পাঠানো হবে।