নরসিংদীতে গণপিটুনিতে দুজন নিহত

গণপিটুনি
প্রতীকী

নরসিংদীর শিবপুরে ডাকাত সন্দেহে স্থানীয় ব্যক্তিদের গণপিটুনিতে দুজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত একজনকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। গতকাল মঙ্গলবার রাত তিনটার দিকে উপজেলার যোশর ইউনিয়নের মুরগীবেড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় ব্যক্তিদের ভাষ্য, উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের কয়েকটি বাড়িতে ডাকাতি শেষে পার্শ্ববর্তী যোশর ইউনিয়নের মুরগীবেড় গ্রাম হয়ে পালাচ্ছিলেন একদল ব্যক্তি। এত রাতে এই পথ ধরে তাঁদের চলাচল ও গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় স্থানীয় কয়েকজন পাহারাদারের চিৎকারে আশপাশের শতাধিক মানুষ জড়ো হয়ে যান। তাঁদের তিনজনকে ঘিরে ধরা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন। তাঁদের আচরণ সন্দেহজনক মনে হওয়ায় পিটুনি দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, ঘটনাস্থলটি চারটি গ্রামের সংযোগস্থল।

গণপিটুনিতে নিহত দুজনের একজন হলেন কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার কমলপুর এলাকার আমিনুল হকের ছেলে সোহেল মিয়া (৩২)। অন্যজনের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। আহত অবস্থায় আটক ব্যক্তি হলেন কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার পশ্চিম আবদুল্লাহপুর এলাকার আবদুল কুদ্দুসের ছেলে মানিক মিয়া (২৫)।

পুলিশ ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে দেশীয় অস্ত্রধারী ১০ থেকে ১৫ জনের একদল ডাকাত জয়নগর ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের হারুন, গোলজার ও কাঞ্চন নামের তিন ভাইয়ের বাড়িতে ডাকাতি করতে যান। এ সময় তাঁরা কয়েক লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করেন। ডাকাতি শেষে পার্শ্ববর্তী যোশর ইউনিয়নের মুরগীবেড় গ্রাম হয়ে পালানোর সময় গ্রামের পাহারাদারদের সন্দেহ হয়। এ সময় গ্রামবাসী জড়ো হয়ে ডাকাতদের ধাওয়া করলে তাঁরা গ্রামবাসীর ওপর হামলার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে গ্রামবাসী পিটুনি দিলে ঘটনাস্থলে দুজনের মৃত্যু হয়। একজনকে আহত অবস্থায় আটক করে পুলিশ।

শিবপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা আজিজুর রহমান বলেন, ‘আটক মানিক মিয়াকে আমাদের হেফাজতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাঁকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে ডাকাতির বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি আমরা। নিহত দুজনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এই তিনজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যাসহ একাধিক মামলা আছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি বেশ কিছু ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে এই এলাকায়। আতঙ্কে গ্রামবাসী নিয়মিত পাহারা দিচ্ছেন। ১৫ নভেম্বর উপজেলার যোশর ইউনিয়নের ভঙ্গারটেক গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মিয়ার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই রাতে একদল ডাকাত ঘরের দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে বাড়ির লোকজনকে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে। ঘরে থাকা টাকাসহ ১০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় তারা। পরের দিন ১৬ নভেম্বর রাতে একই ইউনিয়নের মুরগীবেড় গ্রামের মিলন মিয়ার বাড়িতে ও নৌকাঘাটা গ্রামের এক প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতি হয়। এ ছাড়া সম্প্রতি জয়নগর ইউনিয়নের ভেড়ামারা এলাকার রশিদ মীর ও মনির মীরের বাড়ি, গিলাবের গ্রামের বাসু ও মোক্তারের বাড়ি এবং কুমারটেক এলাকার একটি বাড়িতে ডাকাতি হয়। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে একের পর এক বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় জড়িতদের কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। ডাকাতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে স্থানীয় ব্যক্তিরা মানববন্ধনও করেছেন।