বগুড়ার নন্দীগ্রামের কুমিড়া পণ্ডিতপুকুর উচ্চবিদ্যালয়ে হামলায় বই বিতরণ কার্যক্রম পণ্ড হওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। উপজেলার ভাটরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোর্শেদুল বারীসহ ১৩ জনকে আসামি করে গতকাল শনিবার থানায় মামলা হয়েছে।
ভাটরা ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য বেলাল হোসেনের ছেলে তৌহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে গতকাল রাতে নন্দীগ্রাম থানায় মামলাটি করেন। মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান মোর্শেদুল বারীর বিরুদ্ধে হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
নন্দীগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল ইসলাম মামলার খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, মামলায় ১৩ জনের নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি ২০ থেকে ৪০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী মার্চ-এপ্রিল মাসে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী মোর্শেদুল বারী ও তাঁর ভাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য মজনুর রহমান। ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাওয়া নিয়ে দুই ভাইয়ের বিরোধ এখন তুঙ্গে।
এর মধ্যে এক ভাই মজনুর রহমান কুমিড়া পণ্ডিতপুকুর উচ্চবিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পদে আছেন। মোর্শেদুল বারী ভাইকে সরিয়ে সেখানে সভাপতি করতে চেয়েছিলেন তাঁর এক সমর্থককে। কিন্তু মজনুরকে সভাপতি করে গঠিত অ্যাডহক কমিটির অনুমোদন দেয় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড। এতে ক্ষুব্ধ হন ইউপি চেয়ারম্যান মোর্শেদুল বারী। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে হুমকি ও নিরাপত্তার অভিযোগ তুলে নন্দীগ্রাম থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
মজনুর রহমান অভিযোগ করেন, তাঁর ভাই মোর্শেদুল ইসলামের হুমকিতে বিদ্যালয়ছাড়া প্রধান শিক্ষক। নিরাপত্তার অভাবে তিনি বিদ্যালয়ে আসতে পারছেন না। প্রধান শিক্ষক না আসায় নতুন শিক্ষাবর্ষে ৬০০ শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া সম্ভব হয়নি। গতকাল শনিবার বই বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। নতুন বই নেওয়ার জন্য প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসে। কিন্তু চেয়ারম্যান মোর্শেদুল বারীর নেতৃত্বে লাঠিসোঁটাসহ হামলা চালিয়ে বই বিতরণ কার্যক্রম পণ্ড করা হয়। হামলায় আহত হয়েছেন সাবেক ইউপি সদস্য আকতারুজ্জামান মানিক ও বেলাল হোসেনসহ তিনজন। আহত ব্যক্তিরা বর্তমানে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভাটরা ইউপি চেয়ারম্যান মোর্শেদুল বারী। তাঁর ভাষ্য, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ষড়যন্ত্র করে গোপনে তাঁর ভাই মজনুরকে সভাপতি করেছেন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। জনরোষের ভয়ে বিদ্যালয়ে আসছেন না প্রধান শিক্ষক। শিক্ষক ছাড়াই গতকাল বই বিতরণের উদ্যোগ নিলে উত্তেজিত জনতা সেখানে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। হামলার সঙ্গে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেন তিনি।