চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের রামদাসদী এলাকায় মেঘনা নদীর বাঁধের পাশে বিরাট এলাকাজুড়ে বালু মজুত করা হয়েছে। বালুবাহী জাহাজ ভেড়ানোর জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অনুমতি ছাড়া তৈরি করা হয়েছে জেটিও।
এলাকার লোকজন বলছেন, মজুত করা বালু থেকে পানি চুইয়ে বাঁধের ক্ষতি হচ্ছে। নদীর পাড় খনন করে জেটি নির্মাণের কারণেও বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব কারণে প্রায় তিন শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত চাঁদপুর ও হাইমচর নদীর তীর রক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে।
ওই স্থান থেকে বালুর মজুত সরানো ও বাঁধ রক্ষার দাবিতে গতকাল বুধবার রামদাসদী এলাকায় মেঘনার পাড়ে জড়ো হন এলাকাবাসী। তাঁরা সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। খবর পেয়ে পাউবোর কর্মকর্তা, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের লোকজন সেখানে গিয়ে গ্রামবাসীর দাবি মানার আশ্বাস দেন। পরে আন্দোলন স্থগিত করেন এলাকার লোকজন।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, বালু রাখা ও জেটি করার কারণে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ কাজের জন্য পাউবোর অনুমতি নেওয়া হয়নি। তা ছাড়া এই বালু বাতাসে উড়ে আশপাশের বাড়িতে গিয়ে পড়ছে। এতে পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে।
বালু দেখাশোনার কাজে নিয়োজিত লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিঙ্গাপুরে রপ্তানির জন্য টাঙ্গাইলের যমুনা নদী থেকে জাহাজে করে এখানে বালু এনে রাখা হচ্ছে। এখান থেকে জাহাজে করে সেগুলো চট্টগ্রামে নেওয়া হবে। সেখান থেকে সিঙ্গাপুরে। টাঙ্গাইলের আহসান উল্লাহ নামের এক ব্যবসায়ী এই বালু আনছেন।
জানতে চাইলে এখানকার ব্যবস্থাপক নবীনুর রহমান খান বলেন, একটি কোম্পানির মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে বিপুল পরিমাণ বালু রপ্তানি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৮-১০ লাখ ঘনফুট বালু পাঠানো হয়েছে। আরও ৯ লাখ ঘনফুট পাঠানো হবে। রপ্তানির জন্য সরকারের অনুমতি আছে।
তবে পাউবোর জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান বলেন, ‘বালু মজুতের বিষয়টি লক্ষ্মীপুর মডেল ইউপির চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জানতে পারি। কিন্তু বাঁধের পাশে বালু মজুত ও জেটি তৈরির জন্য কেউ অনুমতি নেননি। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে।’
গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, রামদাসদী গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পসংলগ্ন মেঘনার পাড়ে প্রায় পাহাড় সমান বালুর স্তূপ। পাশে নদীতে আরও ৭-৮টি বালুভর্তি জাহাজ ভেড়ার অপেক্ষায়। স্থানীয় লোকজন এসব জাহাজ থেকে বালু খালাস করতে দিচ্ছেন না। তাঁরা এর বিরুদ্ধে মানববন্ধন করছেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উজ্জল হোসেন বলেন, বালু মজুতকারীরা কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তবে তাঁদের কাছে অনুমতিপত্র আছে বলে দাবি করেছেন। দুই দিনের মধ্যে সেসব কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। এর আগ পর্যন্ত বালু মজুত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।