নদীর ওপর সড়ক, তারপর খণ্ড খণ্ড পুকুর

নদীর মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে সেতুবিহীন আড়াআড়ি সড়ক। বাঁয়ে ৩০ একর নদীর জায়গা দখল করে তৈরি করা হয়েছে মাছের খামার, যাতে বন্ধ হয়ে গেছে পানিপ্রবাহ। গত রোববার কুড়িগ্রামের রাজারহাটের পাঠানহাট-কৈলাসকুটি সড়কে। ছবি: প্রথম আলো
নদীর মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে সেতুবিহীন আড়াআড়ি সড়ক। বাঁয়ে ৩০ একর নদীর জায়গা দখল করে তৈরি করা হয়েছে মাছের খামার, যাতে বন্ধ হয়ে গেছে পানিপ্রবাহ। গত রোববার কুড়িগ্রামের রাজারহাটের পাঠানহাট-কৈলাসকুটি সড়কে।  ছবি: প্রথম আলো

দেশ স্বাধীনের সময় মোহন্ত দাসের বয়স ছিল ১০ বছর। চাকিরপশার নদীতে তিনি বাবার সঙ্গে মাছ ধরতেন, গোসল করতেন। নদীপাড়েই দিনের বেশির ভাগ সময় কাটত তাঁর। তখন নদী ছিল খরস্রোতা ও গভীর। আশির দশকে সেই নদীর ওপর আড়াআড়ি সড়ক দিয়ে পানিপ্রবাহে বাধা দেওয়া হলো। তারপর নদীর বড় অংশে খণ্ড খণ্ড পুকুর বানিয়ে শুরু হলো নদী দখলের প্রতিযোগিতা।

এখানেই শেষ নয়, নদীটিকে জলমহাল হিসেবে ইজারা দেওয়া হলে নদীর সঙ্গে নদীপারের মানুষের ওপরও নির্যাতন বেড়ে গেল। একপর্যায়ে মোহন্ত দাসদের স্মৃতিময় নদীতে নামাই নিষিদ্ধ হয়ে গেল।

মোহন্ত দাস দুঃখ করে বলেন, ‘জেলের হইল জলত জীবন। বাড়ির উঠানোত নদী। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে নদীর মুখ দেখি। কিন্তু ভয়ে নদীত নাইমবার পাই না।’

চাকিরপশার নদীটি তিস্তা নদীর উপনদী। এটি মূলত বুড়িতিস্তা নদীর উজানের অংশ। নদীটির উৎপত্তিস্থল রাজারহাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের ইটাকুড়ি নামক নিম্নাঞ্চল (দোলা) থেকে।

নদীপারের বাসিন্দারা জানান, উজানের লালমনিরহাটের মোস্তফী এবং কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার পাঁচটি মৌজার নিম্নাঞ্চলের পানি মিলে চাকিরপশার নদীর প্রবাহের সৃষ্টি হয়েছে। চাকিরপশার নদী বিভিন্ন নামে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার কাঁচকোলে একসময় ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিলিত হতো। কিন্তু ২৫-৩০ বছর আগে তিস্তা নদী উত্তর পাড় ভেঙে উত্তরে এগিয়ে এলে এ নদীর অনেকটাই তিস্তার ভেতরে ঢুকে পড়ে। তখন বুড়িতিস্তা নদী দুই ভাগে বিভক্ত হয়। রাজারহাট থেকে চাকিরপশার তথা বুড়িতিস্তা হয়ে যায় তিস্তার একটি উপনদী, অন্যদিকে উলিপুরের অংশে থাকা বুড়িতিস্তা এখন তিস্তা নদীর শাখানদী।

নদী গবেষকেরা বলছেন, সরকারি অব্যবস্থাপনা ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অপপ্রয়োগে এমন কোনো নির্যাতন নেই, যা এই নদীর ওপর হয়নি। নদী গবেষক ও চাকিরপশার নদী সুরক্ষা কমিটির সমন্বয়ক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, দীর্ঘদিনের সরকারি উদাসীনতায় ব্যক্তিগত দখল, সরকারি অব্যবস্থাপনা এই নদীর করুণ অবস্থার জন্য দায়ী।

তবে চাকিরপশার নদী নিয়ে আশার কথা শোনালেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তাগিদে গত ৫ মার্চ কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক ২২ জন দখলদারের একটি তালিকা প্রণয়ন করেছেন। ৪ আগস্ট নদী রক্ষা কমিশন থেকে জেলা প্রশাসককে আবারও চিঠি দিয়ে অবৈধ দখলদারদের আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে উচ্ছেদ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় নদী থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ও ইজারা বাতিল করে নদীটির জীবন্ত সত্তা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।

চাকিরপশার নদীর জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়। ছবি: প্রথম আলো

নদীজুড়ে দখল আর দখল

নদীপারের বাসিন্দারা বলছেন, এরশাদের আমলে মন্ত্রী ছিলেন উলিপুরের এ কে এম মাঈদুল ইসলাম। তাঁর আত্মীয় মীর ইসমাইল হোসেনের বাড়ি যাওয়ার জন্য জলমহাল ব্যবস্থাপনা আইন লঙ্ঘন করে পাঠানহাটে নদীর ওপর একটি আড়াআড়ি সড়ক নির্মাণ করা হয়। নদীর জায়গা দখল করে প্রথম পুকুর করেন চাকিরপাশা ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান মীর ইসমাইল হোসেন।

রাজারহাট সদর ইউনিয়নের পাঠানহাটে নদীর অন্তত ৪০ একর জমিতে ৬টি পুকুর করেছেন উপজেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি মেজর (অব.) ইউনুছ আলী। ৩০ একর জমিতে বাড়িসহ তিনটি পুকুর প্রাচীর দিয়ে ঘিরে তিনি গড়ে তুলেছেন কৃষি খামার। সেখানে তাঁর পুকুরে পানি দেওয়ার জন্য বিএডিসি থেকে বসানো হয়েছে সেচপাম্প। পুকুরপাড়ে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ গাছ। দক্ষিণ দিকে নির্মাণ করা হয়েছে গবাদিপশু রাখার একটি শেড এবং একটি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়। এ ছাড়া তাঁর বাড়ির সামনে নদীর ৩ একর জায়গা বালু ভরাট করে বিক্রিও করেছেন তিনি।

নদী দখল প্রসঙ্গে ইউনুছ আলী বলেন, ১৯৯২-৯৩ সালে তিনি সেনাবাহিনীতে চাকরিকালীন স্থানীয় লোকজনের কাছে ৪০ একর জমি কিনেছেন। তারপর এসব জমিতে তিনি পুকুর করেছেন। তাঁর দখলকৃত জমির দলিলপত্র আছে বলে দাবি করেন তিনি।

তবে স্থানীয় জেলে আবুল কালাম বলেন, ‘ইউনুছ আলীর দখল করা এই জায়গা ছিল নদীর মূল প্রবাহ। কিছু জমির নিচু অংশে ধান চাষ হইত। আমি নিজেও দেড় একর জমিত ধান চাষ করতাম। ইউনুছ আলী প্রভাব খাটিয়ে নদীর এই জায়গা দখল করি নিছে।’

নদীর দখলকৃত জায়গায় পুকুর বানানো এবং সেখানে সরকারি সেচপাম্পের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয় লোকজন। এ বিষয়ে জেলা বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী ফারজুল আরেফিন জানান, ২০০৮-০৯ সালে মঙ্গা দূরীকরণে পাইলট প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য সেচপাম্পটি দেওয়া হয়েছিল। 

ইউনুস আলীর দখল করা সাম্রাজ্যের পূর্ব দিকে সাত-আট একর আয়তনের দুটি পুকুরের মালিক আহসান হাবীব। তিনি চাকিরপাশা ইউনিয়নের প্রয়াত চেয়ারম্যান মীর ইসমাইল হোসেনের নাতি ও বিএনপি নেতা হাবিবুল্লাহর ছেলে। এরপরের ছয় একর আয়তনের পুকুরটি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও রাজারহাট উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদ ইকবাল সোহরাওয়ার্দীর পরিবারের দখলে রয়েছে। 

উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদ ইকবাল সোহরাওয়ার্দী বলেন, ‘পৈতৃক সূত্রে আমার পরিবারের কাছে নদীর ৪-৫ একর জমি আছে। সরকার নদী উদ্ধার করলে সহযোগিতা করা হবে।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, চাকিরপশার নদীর উৎপত্তিস্থল রাজারহাট সদর ইউনিয়নের ইটাকুড়ি থেকে নাফাডাঙ্গা, সুরিরঘাট, পাঠানহাট, কৈলাশকুটি এবং চাকিরপাশা ইউনিয়নের মাঝাপাড়া ও চান্দামারীর এলাকায় অন্তত দেড় শ একর নদীর জায়গা দখল করে অর্ধশত পুকুর বানানো হয়েছে। এসব পুকুরে মাছ চাষ করছেন স্থানীয় দখলদারেরা। কোনো কোনো পুকুর ইজারা দেওয়া হয়েছে অন্যের কাছে। দখলসূত্রে বেচাবিক্রিও হয়েছে অনেক পুকুর।

এ ছাড়া স্থানীয় মসজিদ কমিটি, মাদ্রাসা ও রাজারহাটের মীর ইসমাইল হোসেন কলেজের বিরুদ্ধেও নদীর জমি দখল ও পুকুর বানানোর অভিযোগ রয়েছে।

কলেজের অধ্যক্ষ সফিকুল ইসলাম দাবি করেন, ১৯৮৭ সালে কলেজের নামকরণের স্বার্থে দাতা মীর ইসমাইল হোসেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নামে নদীর অংশের ২ একর ২৪ শতাংশ জমি ডিড করে দেন। সম্প্রতি উপজেলা মৎস্য অফিস তাদের একটি প্রকল্পের জন্য ঠিকাদারের মাধ্যমে পুকুরটি খনন করে।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আকলিমা বেগম জানান, নদীর জায়গা কোনো অবস্থাতেই ব্যক্তির নামে রেকর্ড হওয়ায় সুযোগ নেই। রেকর্ড সংশোধনের কাজ চলছে। রেকর্ড সংশোধন হলে নদীর পুরো জমি সরকারি খতিয়ানে ফিরে আসবে।

নদীর জায়গা দখল করে পুকুর করা হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো

ক্ষমতা যার জলা তার

ষাটোর্ধ্ব নূর মোহাম্মদের বাড়ি চাকিরপশার নদীর ওপর। পাকিস্তান আমল থেকে তারা তিন ভাই নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। সরকার থেকে তাঁকে দেওয়া হয়েছে জেলে কার্ড। সরকারের জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিও বলছে, ‘জল যার জলা তার’। কিন্তু সরকারি এত নিয়মনীতির পরও তিনি নদীতে মাছ ধরতে পারছেন না। বছর দেড়েক থেকে তিনি রিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন।

নূর মোহাম্মদের মতো চার-পাঁচ শ জেলে পেশার সংকটে পড়েছেন। চাকিরপশার নদী হলেও ১৯৯৬ সাল থেকে নদীর ১৪১ দশমিক ২৯ একর জমি জলমহাল হিসেবে ইজারা দেওয়া হয়। তবে কয়েক বছর ধরে নদীতে নামতেই পারছেন না জেলেরা। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে তাঁরা কষ্টে আছেন।

সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি, ২০০৯-এর ২ নম্বর ধারার ‘খ’ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোনো সমিতিতে যদি এমন কোনো সদস্য থাকেন যিনি প্রকৃত মৎস্যজীবী নহেন তবে সে সমিতি কোনো সরকারি জলমহাল বন্দোবস্ত পাওয়ার যোগ্য হবে না।’ এই ধারার ক অনুচ্ছেদে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘যিনি প্রাকৃতিক উৎস হতে মাছ শিকার এবং বিক্রয় করেই প্রধানত জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি প্রকৃত মৎস্যজীবী বলে গণ্য হবেন।’

তারপরও এ বছর জলমহালের ইজারা পেয়েছেন চাকিরপাশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের (একাংশ) সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক। তিনি চাকিরপাশা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিরও সভাপতি। তাঁর ২০ সদস্যের সমিতিতে মৎস্যজীবীর তালিকায় আছেন তাঁর স্ত্রী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াছমিন বেগমও।

স্থানীয় জেলেরা অভিযোগ করেন, আবু বক্কর মৎস্যজীবী সাজিয়ে জলমহাল লিজ নিয়েছেন। তাঁর হয়ে মোশারফ হোসেন, এনামুল হক, সোহেল ও আকাশ ফারুক, মেহেদী, মুনসহ আরও কয়েকজন নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাঁরা সবাই ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মী।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইজারাদার আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, উপজেলা সমবায় অফিসের মাধ্যমে তিনি সমিতির নিবন্ধন নিয়েছেন এবং মৎস্য চাষ করছেন।

তবে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, ‘চাকিরপাশা মৎস্যজীবী সমিতি একসময় যুব সমিতি ছিল। সরকার যুব সমিতিকে জলমহাল ইজারা দেওয়া বন্ধ করলে তারা মৎস্য সমিতিতে রূপান্তর হয় এবং মৎস্যজীবী সমিতি হিসেবে ২০১০ সালে নিবন্ধন পায়। কিন্তু তারা কীভাবে ও কোন পদ্ধতিতে জলমহাল ইজারা পেয়েছে, সেটা দেখার এখতিয়ার তাঁদের নয়।

নদী থেকে বালু তুলে নদীর জমিতেই ভরাট করে তা বিক্রি করছেন দখলদারেরা। ছবি: প্রথম আলো

জলাবদ্ধতায় ফসলহানি

জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালার ২১ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘বন্দোবস্তকৃত/ইজারাকৃত জলমহালের কোথাও প্রবহমান প্রাকৃতিক পানি আটকে রাখা যাবে না। কিন্তু চাকিরপশার নদী সেই আইনের দেখা মেলেনি। উজান ও ভাটিতে নানা প্রতিবন্ধকতার মাধ্যমে পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে।  

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, নদীর পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে উজানের ছাটমল্লিকবেগ, দিনা, নাটুয়ামহল, পুটিকাটা, পুনকর, চেতনা, দেবীচরণ, দক্ষিণ প্রাণপতিসহ বেশ কয়েকটি মৌজার ২০-২৫ হাজার একর জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে দোফসলি জমি একফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, চাকিরপশার নদী খননের জন্য ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলে নদী খনন করা হবে।

দখল উচ্ছেদ শুরু হয়নি

গত ৫ মার্চ করা জেলা প্রশাসনের তালিকায় নদী দখলদারদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপি নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহর ছেলে আহসান হাবীব, সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির নেতা পনির উদ্দিনের ছেলে বাবলু মিয়া, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদ ইকবাল সোহরাওয়ার্দী, উপজেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি ইউনুছ আলী, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু সায়িদ চৌধুরীর ছেলে নাহিদ আলী, বিএনপির সমর্থক ও রাজারহাট সদর ইউনিয়নে গতবারের বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারুক মণ্ডল ও ঠিকাদার নজরুল ইসলাম।

মোহন্ত দাসের চোখের সামনেই দখল হয়ে গেছে নদী। দখলদার ও ইজারাদারের ভয়ে এখন তিনি নদীতে নামতে পারেন না। ছবি: প্রথম আলো

এ ছাড়া স্থানীয় দখলদার হিসেবে তালিকায় রয়েছেন আবদুস ছালাম, মোজাম্মেল হক, রাজু মিয়া, আবদুস ছালাম (২), আজগার আলী, বাচ্চা হাজী, রফিকুল ইসলাম, হামিদুল ইলাম, সোহেল রানা, আফতার হোসেন, হাসেন আলী, আহম্মদ আলী, আনিছুর রহমান, দুলাল মিয়া ও জুয়েল চৌধুরী।

তবে চাকিরপশার নদী সুরক্ষা কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার আরিফ বলেন, সরকারিভাবে ২২ দখলদারের তালিকা করা হলেও প্রকৃত অর্থে দখলদার অনেক বেশি। কয়েক শ একর জমি দখল হয়ে আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো দখলদারকেই উচ্ছেদ করা হয়নি।

রাজারহাটের ইউএনও ও উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি নূরে তাসনিম বলেন, চাকিরপশার নদী উদ্ধারে কাজ চলছে। খুব শিগগির দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে।

তৎপর নদী রক্ষা কমিশন

চাকিরপশার নদীর পুনরুদ্ধার নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছেন নদীপারের মানুষ। নদীটির বর্তমান অবস্থা ও করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় নদী কমিশন। ৬ আগস্ট কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো চিঠিতে নদী রক্ষা কমিশন ইজারা বাতিল, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ এবং আড়াআড়িভাবে নির্মিত সড়কের উপযুক্ত অংশে সড়কসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিতে বলেছে।

রংপুর বিভাগের নদী-খাল-বিল-জলাশয়বিষয়ক মাস্টারপ্ল্যান কমিটির সদস্য তুহিন ওয়াদুদ বলেন, সরকার চাইলেই ঐতিহ্যবাহী চাকিরপশার নদীকে রক্ষা করতে পারে। এই নদী উদ্ধার করে রংপুর বিভাগের সবচেয়ে আকর্ষণীয় নদীভিত্তিক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যায়।