নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় মেঘনা নদী, ব্রহ্মপুত্র নদ ও আশপাশের শাখানদে অবৈধভাবে বাঁশ পুঁতে ও গাছের ডালপালা ফেলে মাছ শিকার করা হচ্ছে। এতে মৎস্যসম্পদ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হলেও প্রশাসন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছরই উপজেলার মেঘনা নদীর নুনেরটেক, আনন্দবাজার, ঝাউচর, চরগোয়ালদী, দুধঘাটা ও মেঘনার শাখানদীর আষাঢ়িয়ারচর, নয়াগাঁও, দড়িগাঁও, চরকিশোরগঞ্জ এবং ব্রহ্মপুত্র নদের শম্ভুপুরা থেকে অলিপুরা বাজার পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অবৈধ পন্থায় মাছ ধরা হয়। এ বছরও প্রায় ২২০টি স্থানে নদ-নদীর দুই পাশের জায়গা দখল করে মাছ ধরা হচ্ছে। চারদিকে বাঁশ পুঁতে মাঝখানে গাছের ডালপালা ফেলে ওই স্থানে খাবার দিয়ে মা মাছসহ পোনা জড়ো করা হয়। পরে ছোট জাল দিয়ে ঘিরে ফেলে মাছ শিকার করা হয়। ছোট ছিদ্রযুক্ত এসব জালে মা ও পোনা মাছসহ সব ধরনের মাছ আটকা পড়ে।
গতকাল রোববার সকালে চরগোয়ালদীয় গিয়ে দেখা যায়, ঘের তৈরি করে মাছ শিকার করছেন হরিকৃষ্ণ সাহা নামের এক জেলে। তাঁর বাড়ি চাঁদপুরে। তিনি বলেন, ‘আমরা দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে নদীতে মাছ শিকার করি। এসব ঘেরের মালিক এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই ঘেরের মালিক চরগোয়ালদীর জসীম উদ্দীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এলাকার অনেকেই ঘের তৈরি করে মাছ ধরে। আমিও তাই ঘের তৈরি করেছি। প্রশাসন থেকেও কোনো বাধা দেওয়া হয়নি।’
নয়ন মিয়া নামের একজন জেলে বলেন, ‘একটি বড় ঘের তৈরি করতে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। বড় একটি ঘের থেকে প্রতি মৌসুমে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার মাছ পাওয়া যায়। যেসব ছোট জাল দিয়ে চারদিকে ঘের দেওয়া হয়, সেসব জাল থেকে পোনাসহ কোনো ধরনের মাছ বের হয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এতে মৎস্যসম্পদ ধ্বংস হচ্ছে, এ কথা সত্য। ঘের মালিকের পক্ষ হয়ে আমরা কাজ করি। প্রশাসনের বিধিনিষেধ থাকলে আমরা এ কাজে আসতাম না।’
জানতে চাইলে উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদা আকতার বলেন, ‘নদ-নদী দখল করে মাছ আটকে ঘের বা ঝোঁপ দেওয়া মৎস্য আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মা মাছ ও পোনা ধরা পড়ার কারণে মাছের বংশবিস্তার হচ্ছে না। মৎস্যসম্পদ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক চাপ ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমি পুরোপুরি সহযোগিতা পাচ্ছি না।’