>• নদীর প্রাণ ফিরিয়ে আনতে খননের উদ্যোগ নেয় পাউবো
• দুটি ভাটা উচ্ছেদ করা হলেও এখনো রয়ে গেছে তিনটি
• মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের অনুরোধের কারণে ওই তিনটি ভাটা এখনো উচ্ছেদ হয়নি
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় প্রায় অস্তিত্বহীন একটি নদীর খাস জমি দখল করে তৈরি করা হয়েছিল কয়েকটি ইট ভাটা। পরে নদীর প্রাণ ফিরিয়ে আনতে খননের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। নদীর সীমানার মধ্যে পড়া দুটি ভাটা উচ্ছেদ করা হলেও এখনো রয়ে গেছে তিনটি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের অনুরোধের কারণে ওই তিনটি ভাটা এখনো উচ্ছেদ হয়নি। ফলে বন্ধ রয়েছে নদী খননের কাজ। ইটভাটা তিনটির অবস্থান শোভনা ইউনিয়নে। নদীর প্রায় ১০ কিলোমিটার খননকাজ শেষ হলেও শুধু ভাটার কারণে খননের সুফল পাচ্ছেন না এলাকাবাসী।
পাউবোর কর্মকর্তারা জানান, নদী খননের আগে জরিপে খাসজমিতে থাকা ৫৭৩টি ছোট-বড় স্থাপনাগুলোর তালিকা করা হয়। খননকাজের আগে ওই স্থাপনাগুলো উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসনকে তালিকা দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসন স্থাপনাগুলো সরিয়ে নিতে গত বছরের নভেম্বরে মালিকদের চিঠি পাঠায়।
পাউবোর এক কর্মকর্তা বলেন, ওই চিঠি পাওয়ার পর মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ পাউবোর কর্মকর্তাদের নিজের বাড়িতে ডেকে পাঠান। ওই সময় ইট পোড়ানোর মৌসুম থাকায় তিনি ভাটা তিনটি ভেঙে ফেলতে নিষেধ করেন। মৌসুম পার হয়ে গেলেও মন্ত্রীর ওই অনুরোধের কারণে এখনো ভাটা তিনটি ভাঙা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান ওই কর্মকর্তা। নিজেদের উদ্যোগেও মালিকপক্ষ ভাটা সরিয়ে নিচ্ছে না। প্রতিমন্ত্রী অনুরোধ করায় ভাটার ব্যাপারে নীরবতা পালন করতে হচ্ছে পাউবোকে।
গত আগস্টে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভায় ভদ্রা নদীর খননে বাধা হিসেবে ভাটা তিনটির কথা তুলে ধরে পাউবো খুলনা-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, পুনঃখননকাজ প্রায় ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। কিন্তু তিন ইটভাটার কারণে বর্তমানে কাজ বন্ধ রয়েছে। বারবার নোটিশ দিয়েও ভাটা সরানো যাচ্ছে না।
নারায়ণ চন্দ্রের বাড়ি ডুমুরিয়ায়। তিনি নিজেই উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি। ডুমুরিয়ায় তাঁর নিজেরই একটি ইটভাটা রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ প্রথম আলোকে বলেন, যখন ভাটা ভাঙার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল, তখন ছিল ভরা মৌসুম। এ কারণে মৌসুম শেষ হওয়া পর্যন্ত পাউবোকে ভাটা না ভাঙতে অনুরোধ করা হয়েছিল। তবে এখনো যে ভাটা ভাঙা হয়নি, তা জানেন না বলে দাবি করেন মন্ত্রী। এ বিষয়ে পাউবোর কর্মকর্তারা তাঁকে কিছু জানায়নি বলে জানান তিনি।
গত ৩ সেপ্টেম্বর শোভনা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, নদীর ভেতর দিয়ে চলে গেছে একটি পাকা সড়ক। ওই সড়কটি পশ্চিম ও পূর্ব শোভনাবাসীর একমাত্র সংযোগ পথ। ওই সড়কের ওপর দাঁড়িয়েই স্পষ্ট দেখা যায় নদীর মাঝে থাকা ‘সেফ ব্রিকস’ ও ‘এবি-১’ নামের দুটি ইটভাটা। আর এরপরেই ‘সেতু ব্রিকস’ নামের আরেকটি ইটভাটার অবস্থান। ২৪ সেপ্টেম্বর সোমবার আবার সরেজমিনে দেখা গেছে, সেফ ব্রিকসটি ভাঙার কাজ চলছে। তবে অন্য দুটি আগের মতোই রয়েছে।
সেতু ব্রিকসের মালিক ছিলেন ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গাজী আবদুল হাদী। গত বছরের ২৬ নভেম্বর তিনি মারা যাওয়ার পর ওই ভাটার দায়িত্বে রয়েছেন তাঁর ভাই গাজী আবদুস সালাম। জানতে চাইলে আবদুস সালাম বলেন, যখন নোটিশ করা হয়েছিল তখন ছিল ইটের ভরা মৌসুম। এ কারণে প্রতিমন্ত্রীকে ধরে কিছুটা সময় বাড়িয়ে নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল। এখন ধীরে ধীরে ভাটা সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। খননের কাজ শুরু করলেই পুরো ভাটা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।
এবি-১ ভাটার মালিক জি এম হাফিজুর রহমান। ওই ভাটার ব্যবস্থাপক মো. ইব্রাহিম বলেন, এখনো ভাটা ভাঙার কাজ শুরু হয়নি। তবে ধীরে ধীরে ভেঙে সরিয়ে নেওয়া হবে। সেফ ব্রিকসের মালিক খান মো. মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টির কারণে ভাটা ভাঙতে দেরি হয়েছে। তবে আগামী এক মাসের মধ্যে ভাটার সব সরঞ্জাম সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।
জানতে চাইলে পাউবোর খুলনা-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, যেহেতু ইটভাটার কারণে মূল নদীর খননের উপকারিতা পাওয়া যাচ্ছে না, এ কারণে নদীর মাঝ বরাবর চলে যাওয়া সড়কটি আপাতত রেখে দেওয়া হয়েছে। যখন ভাটা ভেঙে ফেলা সম্ভব হবে, তখন সড়কটিও ভেঙে ফেলা হবে। তা ছাড়া জেলা প্রশাসনকে ইটভাটা ভাঙার জন্য আবারও অনুরোধ করা হয়েছে। আশা করা যায়, দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাটা তিনটি ভেঙে নদী খননের কাজ শেষ করা যাবে।