নকল মদ তৈরির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া চারজন
নকল মদ তৈরির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া চারজন

নকল মদ তৈরির কারখানার রাসায়নিক কর্মকর্তা ছিলেন ভাঙারি ব্যবসায়ী

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার বেশ অনেক বছর ধরেই এক বন্ধুর সঙ্গে অল্পস্বল্প মদ্যপান করতেন। গত ২৮ জানুয়ারিও ফোন করে মদ আনিয়েছিলেন। সেই মদ পান করে তিনি মারা গেছেন গত সোমবার ভোর রাতে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ওই মদের সরবরাহকারী দুজনকে শনাক্ত করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা (গুলশান) বিভাগ। পরে অভিযান চালিয়ে ছয়জনের একটি দলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গোয়েন্দা (গুলশান) বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান অভিযানটির নেতৃত্ব দেন। সোমবার রাত পৌনে নয়টায় প্রথমে তেজগাঁওয়ের ইয়ানতুন চাইনিজ রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে তিনজনকে ধরা হয়। পরে তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কারখানার খোঁজ পাওয়া যায়। সেখান থেকে গ্রেপ্তার হন আরও তিনজন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে চক্রের দুজনকে মোটরসাইকেলে করে ক্রেতার কাছে মদ পৌঁছে দিতে দেখা যায়।

রাজধানীর ভাটারা থানাধীন খিলবাড়িরটেক এলাকার এক বাসায় নকল সীল লাগিয়ে তৈরি করা হতো নকল মদ

মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভাটারায় তিনজন, ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকায় একজন ও মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় দুজনের মৃত্যুর পেছনে এই চক্র জড়িত। তাঁরা ভাটারা থানাধীন খিলবাড়িরটেক এলাকার এক বাসার দ্বিতীয় তলায় নকল মদের কারখানা খুলে বসেছিলেন।

গ্রেপ্তার হওয়া ছয়জন হলেন কারখানার মালিক নাসির আহমেদ ওরফে রুহুল (৪৮), ব্যবস্থাপক সৈয়দ আল আমিন (৩০), প্রধান রাসায়নিক কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম (৪৫), কর্মচারী মনোতোষ চন্দ্র অধিকারী ওরফে আকাশ (৩৫), রেদোয়ান উল্লাহ (৩৫) ও সাগর ব্যাপারী (২৭)। কারখানা থেকে বিপুল পরিমাণ ভেজাল মদ ও মদ তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম, রাশিয়ান, স্কটিশ, সুইডিশসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদের বোতল ও হলোগ্রাম উদ্ধার করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজে রেদোয়ান ও মনতোষ চন্দ্র অধিকারী ওরফে আকাশকে মোটরসাইকেলে করে ২৮ জানুয়ারি এক বোতল মদ দিয়ে যেতে দেখা যায়।

ভাটারা থানার খিলবাড়িরটেকের এক বাসায় নকল মদ তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে

মশিউর রহমান বলেন, এই দলের প্রধান রাসায়নিক কর্মকর্তা আদতে ভাঙারি দোকানে মালপত্র সরবরাহ করতেন। তাঁর বাড়ি চাঁদপুরে। বিভিন্ন প্লাস্টিক ও কাচের বোতল সংগ্রহ করে মিটফোর্ডে বিক্রি করে চলতেন। চক্রের নেতা নাসির দীর্ঘদিন ধরেই মদ বিক্রি করে আসছেন। মাঝেমধ্যে একটি মদের বোতল থেকে দুই থেকে তিনটি বোতল তৈরি করতেন। ইদানিং ওয়্যারহাউসগুলো থেকে মদ কেনায় কড়াকড়ির পরিপ্রেক্ষিতে বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে তাঁরা নকল মদ তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছেন।

অনুসন্ধানে পুলিশ জানতে পেরেছে, এই চক্রের লোকজন মিটফোর্ড হাসপাতালের আশপাশের এলাকা থেকে স্পিরিট, স্টিকার, রং সংগ্রহ করেন। তারপর চিনি পোড়ানো রং ব্যবহার করে মুহূর্তের মধ্যে নকল মদ তৈরি করেন। কারখানাটির ব্যবস্থাপক আল আমিন বিভিন্ন খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতার কাছে মদ পৌঁছে দিতেন। তাঁরা আবার বিক্রি করতেন সেবনকারী পর্যায় পর্যন্ত।

আসামিদের বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি নিয়মিত মামলা হয়েছে।