শাহিনুর গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন এবং ধর্ষণের পর ধর্ষকেরা ভারী কিছু দিয়ে শাহিনুরের মাথার পেছনে আঘাত করে। এতে শাহিনুরের মাথার পেছনের খুলি ফেটে যায়। ফলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। শেষে মারা যান তিনি। শাহিনুর হত্যার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এসব তথ্যই উল্লেখ করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদন বাজিতপুর থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। কিশোরগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতে গঠন করা হয় তিন সদস্যের মেডিকেল টিম। টিমের নেতৃত্বে দেন কিশোরগঞ্জ জেলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা সজীব কুমার।
জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন হাবিবুর রহমান বলেন, ‘শাহিনুর গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন—এটি প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত ছিলাম। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আরও কিছু প্রক্রিয়াগত ধাপ শেষ করার পর শতভাগ নিশ্চিত হওয়া গেছে। হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে এই সব উল্লেখ আছে। আগামীকাল (রোববার) প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’
পাঁচ আসামিকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের গতকাল ছিল চতুর্থ দিন। জিজ্ঞাসাবাদের আর চার দিন বাকি আছে। বাজিতপুর থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। চার দিনের জিজ্ঞাসাবাদের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা বাজিতপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সারোয়ার জাহান কিছু বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, সময় হলে সব জানানো হবে।
তবে চার দিনেও আসামিরা মুখ না খোলার তথ্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন শাহিনুরের পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের বক্তব্য, শাহিনুরকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে। ঘটনাপ্রবাহ, আলামত আর মেডিকেল টিমের প্রতিবেদন থেকে এটা স্পষ্ট। আর এসবের সঙ্গে যুক্তদের বেশ কয়েকজন এখন পুলিশের হাতে।
শাহিনুরের ভাই সুজন মিয়া বলেন, ঘটনার রাত থেকে হত্যাকারীরা পুলিশের হাতে। এরপরও রহস্য উন্মোচন না হওয়ায় তাঁরা একটু চিন্তায় আছেন।
গতকাল কথা হয় বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর বাজার এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে। তাঁদের অনেকে ঘটনার রাতে শাহিনুরকে গুরুতর আহত অবস্থায় সততা ফার্মেসিতে আনার দৃশ্যের প্রত্যক্ষদর্শী। তাঁরা জানালেন, শাহিনুরের চিকিৎসা নিয়ে চালক ও চালকের সহকারী গোপনীয়তা রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ভয়ের ছাপ ছিল। ওই দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে, শাহিনুরের আসল খুনি তাঁরাই।
শাহিনুর ইবনে সিনা হাসপাতালে ঢাকার কল্যাণপুর শাখায় নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বাড়ি কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুড়ি ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামে। ঢাকা থেকে পিরিজপুরের মধ্যে চলাচলকারী স্বর্ণলতা পরিবহনের একটি বাসযোগে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি ফেরার পথে শাহিনুরের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। গত সোমবার রাত ১১টার দিকে পুলিশ কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শাহিনুরের মৃতদেহ উদ্ধার করে। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া চালক নুরুজ্জামান নুরু ও চালকের সহকারী লালন মিয়াসহ গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার ভেঙ্গরদি গ্রামের আল আমিন, লোহাদি গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও কটিয়াদীর ভোগপাড়া গ্রামের খোকন মিয়াকে আট দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে।
এদিকে গতকাল শাহিনুর হত্যার বিচার চেয়ে বাজিতপুরে পৃথক মানববন্ধন হয়েছে। সকালে উপজেলার জামতলি এলাকায় মানববন্ধন করে ‘আশ্রয়’ নামে কটিয়াদীর একটি সামাজিক সংগঠন। এতে বক্তব্য দেন যুব মহিলা লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহতথ্য ও গবেষণা সম্পাদক তানিয়া সুলতানা, শাহিনুরের ভাই কফিল উদ্দিন, কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম, মুন্সি আ. হেকিম কারিগরি কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল হক জোয়ারদার, আশ্রয় সংগঠনের সমন্বয়ক রাজিব সরকার।
এদিন বাজিতপুর সিনেমা হল মোড়ে মাদকবিরোধী সংগঠনের নেতৃত্বে আরেকটি মানববন্ধন হয়।