ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) জরিপে বাংলাদেশে দুর্নীতি বাড়ার যে তথ্য এসেছে, তার ব্যাখ্যা চেয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেন, রিপোর্ট দেওয়ার নামে সুইপিং কমেন্টস (যাচ্ছেতাই মন্তব্য) করলেই হবে না। ফ্যাক্টস অ্যান্ড ফিগারসহ (তথ্য-উপাত্ত) পরামর্শও দিতে হবে। আজ মঙ্গলবার দুদক কার্যালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন দুদক চেয়ারম্যান।
সকালে টিআইবি কার্যালয়ে সারা বিশ্বের সঙ্গে একযোগে দুর্নীতির ধারণাসূচক প্রকাশ করে টিআইবি। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে বাংলাদেশের সূচকে চার ধাপ অবনতি হয়েছে। ২০১৭ সালে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭তম। ২০১৮ সালে এটা হয়েছে ১৩।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা ব্যাখ্যা চাই, কীভাবে এবং কী কী কারণে দুর্নীতি বেড়েছে। আমরা টিআইবির কাছে আগেও তাদের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘তাদের কাছে অ্যানালাইটিকস (বিশ্লেষণ) আছে। ফ্যাক্টস অ্যান্ড ফিগার আছে। ফ্যাক্টস অ্যান্ড ফিগার না দিলে সেই রিপোর্ট কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদন নিয়েও দুদক চেয়ারম্যানকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা। সোমবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে ২০১৫ সালে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। গত ১১ বছরে মোট পাচার হয়েছে ৮ হাজার ১৭৫ কোটি ডলার। বর্তমান বাজারদরে এর মূল্যমান ৬ লাখ ৮৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
টিআই ও জিএফআইয়ের প্রতিবেদন সম্পর্কে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘গালভরা প্রতিবেদন সবাই দিতে পারে। আপনাকে বলতে হবে কোন সরকারি কর্মকর্তা, কোন রাজনৈতিক নেতা দুর্নীতি করছেন। কারা কীভাবে কোথায় অর্থপাচার করছে। নইলে, এ মহাসমুদ্রে আমি কাকে ধরব? কাকে খুঁজব?’
আরেক প্রশ্নের জবাবে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘দুদকের কাজ কী, তা যদি কেউ শেখায়, তাহলে তো সমস্যা। আমাদের আইন আছে, তফসিলভুক্ত যে অপরাধ আছে, সে বিষয়ে আমরা কাজ করব। তা ছাড়া এ কথা তো সত্যি যে, সারা দেশের মানুষ দুর্নীতির বিষয়ে সচেতন হয়েছে। টিআইবির রিপোর্ট দিয়ে কিছু হবে না। দুদক দিয়েও দুর্নীতি দমন হবে না। কেবল আমরা সবাই সচেতন হলেই দুর্নীতি দমন ও প্রশমন হবে। দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে, কাজ হচ্ছে, টিআইবি এ কথা স্বীকার করে কি না, তা-ও বলতে হবে।’
দুদকের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে আরেক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি কখনোই বলিনি স্বাধীন নই। আমরা নিঃসন্দেহে স্বাধীন। তবে হ্যাঁ, আমরা অনেক দুর্নীতিবাজকে আটক করতে পারিনি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারিনি। কেউ যদি লন্ডন গিয়ে পালিয়ে থাকে, তাকে কীভাবে আটক করব? সেদিন লুৎফর রহমান বাদলের সম্পত্তি ক্রোক করলাম। কিন্তু সে বিদেশে। তাকে ধরব কীভাবে!’