গুলিবিদ্ধ দুই যুবককে ‘অচেতন’ অবস্থায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর ভোরবেলা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালে আনার পর দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা। এরপর দুই যুবকের মরদেহ পাঁচ দিন ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে আছে। মর্গের ফ্রিজে রাখা দুটি লাশের সন্ধানে কেউ আসেননি। পরিচয় না মেলায় দুই যুবকের লাশ ‘অজ্ঞাত’ হিসেবে আছে।
২৫ ও ২৬ বছর বয়সী ওই দুই যুবক ১৮ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত তিনটার দিকে রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমি-সংলগ্ন এলাকায় র্যাব-২-এর টহল দলের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান। ঢাকা মেডিকেল কলেজে তাঁদের মৃত ঘোষণার পর র্যাবের গণমাধ্যম শাখা থেকে মোবাইলের খুদে বার্তায় জানানো হয়, নিহত দুজন ‘ডাকাত’ দলের সদস্য। তাঁদের কাছ থেকে পিস্তল, চাপাতিসহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র উদ্ধার করে র্যাব।
এ ঘটনায় ১৮ সেপ্টেম্বর র্যাব-২ এর পক্ষ থেকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করা হয়।
ঘটনা সম্পর্কে র্যাব-২ সূত্রে জানা যায়, ডাকাত দলের সদস্যরা বেড়িবাঁধের কাছে অবস্থান করছিল। তারা ডাকাতির জন্য ওই এলাকায় জড়ো হয়েছিল। গোপন সূত্রে র্যাবের টহল দল সেখানে গেলে তারা গুলি ছোড়ে। র্যাব তখন পাল্টা গুলি চালালে দুজন নিহত হয়। নিহত দুজনের পরিচয় জানা যায়নি। ডাকাত দলে পাঁচ থেকে ছয়জন ছিল। অন্যরা পালিয়ে গেছে। বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাস্থল থেকে তিনটি পিস্তল, চাপাতিসহ আরও কিছু ধারালো অস্ত্র পাওয়া যায় বলে র্যাব জানায়।
এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে দুই যুবকের লাশের সুরতহাল করেন মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনিছুর রহমান। সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৮ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে তিনটার দিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের ভেতরে রাস্তার ওপর খালের ওভারব্রিজের দক্ষিণ পাশে দুই দল ডাকাতের মধ্যে গোলাগুলির খবর পেয়ে পুলিশের সদস্যরা সেখানে যান। অন্য ডাকাতেরা পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা অজ্ঞাত (২৫) ও অজ্ঞাত (২৬) দুই পুরুষকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।
সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরুষের (২৫) গায়ের রং ফরসা, লম্বা সাড়ে পাঁচ ফুট, চুল কালো লম্বা। তাঁর চোখ অর্ধেক বোঁজা ও দাঁত দেখা যায়। এই যুবকের লাশের গলার নিচে একটি, পিঠে একটি এবং বুকের পাশে তিনটি করে ছিদ্র ছিল। তাঁর পরনে ছিল নেভি ব্লু হাফ হাতা গেঞ্জি ও সাদা-কালো রঙের জিনসের প্যান্ট।
অন্যদিকে ২৬ বছর বয়সী যুবকের গলার নিচে দুটি, কোমরে একটি, পিঠে তিনটি এবং বুকের ডান পাশে তিনটি করে ছিদ্র ছিল। তাঁর মাথায় রক্তাক্ত জখম ও ছিদ্র ছিল। এই যুবকের গয়ের রং ফরসা, চুল কালো লম্বা এবং উচ্চতা পাঁচ ফুট সাড়ে ছয় ইঞ্চি। তাঁর পরনে ছিল হলুদ হাফ হাতা গেঞ্জি ও জিনসের সাদা-নীল প্যান্ট।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. বুলবুল প্রথম আলোকে বলেন, সনাতন পদ্ধতিতে দুই যুবকের হাতের আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করা হয়েছে। আগামীকাল নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হবে। তাদের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে আবারও আঙুলের ছাপ নিয়ে পরিচয় জানার কাজ করা হবে।
দুই যুবকের পরিচয় মিললে অন্য ‘ডাকাতদের’ সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যেত—এ কথা জানিয়ে র্যাব-২-এর অধিনায়ক লে. আনোয়ারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের (দুই যুবক) পরিচয় সম্পর্কে পুলিশ বলতে পারবে। পুলিশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য র্যাবকে জানানো হয়নি। তাদের পরিচয় জানা গেলে বা কেউ দাবি করলে এদের সম্পর্কে জানা যাবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির এসআই বাচ্চু মিয়া জানান, মর্গে দুই যুবকের লাশের সন্ধানে আজ শনিবার দুপুর পর্যন্ত কেউ আসেননি।