চার বছর ধরে মানব পাচার করে আসছিল দুই ভাই কামাল হোসেন ও জামাল হোসেন। তাদের বাড়ি ফেনীর দাগনভূঞা থানার গনিপুর গ্রামে। ভিয়েতনামে লোক পাঠিয়ে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দুই ভাইসহ মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যরা।
প্রথম আলোকে এই তথ্য জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহ আলম। ভিয়েতনামে মানব পাচারেরর মামলায় গ্রেপ্তার দুই সহোদরসহ তিনজনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন ঢাকার আদালত। আজ মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত কারাগারে পাঠানোর এই আদেশ দেন। দুই ভাই ছাড়া অপর আসামি হলেন জামাল উদ্দিন। জামালউদ্দিনের বাড়িও ফেনীতে।
গত বুধবার পল্টন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জামালউদ্দিনসহ তিনজনকে আটক করে র্যাব। বৃহস্পতিবার রাতে র্যাব-৩ তাঁদের পল্টন থানায় সোপর্দ করে এবং তাদের বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে মামলা করেন র্যাবের এক কর্মকর্তা। এজাহারভুক্তরা অবৈধভাবে ৩৮ জনকে ভিয়েতনামে পাঠিয়েছিলেন। সেখান থেকে ১১ জনকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
ঢাকার আদালতকে পুলিশ প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, বাংলাদেশের এক শ্রেণির অসাধু দালাল চক্র স্বল্প আয়ের মানুষদের প্রলোভন দেখিয়ে আন্তর্জাতিক চক্রের সদস্যদের যোগসাজশে বিদেশে পাচার করে আসছে। সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যদের প্রতারণার শিকার হয়ে নিরীহ মানুষ ভিয়েতনামসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ ছাড়া অবৈধভাবে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। ভিয়েতনামে নির্যাতনের শিকার আপেল শিকদার ও জহির আহম্মেদকে ফেনীর আবদুল্লাহ আল মামুন ও মহিউদ্দিন ভিয়েতনামে বেশি টাকা বেতন দেওয়ার প্রলোভন দেন। দুজনই প্রলোভনে পা দিয়ে প্রত্যেকে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা ভিয়েতনামে যাওয়ার জন্য চুক্তি করেন।
কামাল ও জামালের প্রতিষ্ঠান ‘দ্য জে কে ওভারসিজ লিমিটেড’ অফিসে তাঁরা ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা দেন। পরে ওই বছরের ১৭ নভেম্বর কামাল ও জামালের কাছে আরও ২ লাখ টাকা দেন ভুক্তভোগীরা। পরে আবদুল্লাহ আল মামুন ও মহিউদ্দিন গত বছরের ১৮ নভেম্বর কলকাতা হয়ে ভিয়েতনামে যান। ভিয়েতনামে যাওয়ার পর সেখানে মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য গোলাম আজম ও জাফর তাঁদের নিয়ে সেখানকার হো চি মিন সিটির একটি বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে তাঁদের কিছুদিন রাখার পর একটি ‘স’ মিলে মাসিক ২০০ ডলারে কাজ দেয়। কিন্তু কিছুদিন পর তাঁদের ওই প্রতিষ্ঠান থেকে বাদ দেওয়া হয়। পরে কোনো কাজ না পেয়ে হোটেলে চার মাস ধরে মানবেতর জীবন যাপন করেন। পরে তাঁরা ভিয়েতনামে বাংলাদেশি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ৩ জুলাই বাংলাদেশে ফিরে আসে। মানব পাচারের শিকার হয়ে একইভাবে ভিয়েতনাম থেকে প্রাণেশ কুমার মাহাতো, মাহমুদুল হাসান, এনামুল হক, তোফায়েল আহম্মেদ, শরিফুল ইসলাম, কামাল উদ্দিন ও আনাস বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শাহ আলম বলেন, সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্য আবদুল জব্বার বর্তমানে ভিয়েতনামে অবস্থান করছেন। সেখানে স্থানীয় এক নারীকে বিয়ে করেছেন। দীর্ঘদিন থেকে এই মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যরা নিরীহ মানুষকে বেশি বেতন দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করে আসছে।