দখলদারদের দাপটে বরিশালের আগৈলঝাড়ার পয়সারহাটে বিবর্ণ হয়ে উঠেছে সন্ধ্যা নদী। পয়সারহাট বন্দর ও সেতুর দুই পাশেই অবৈধ দখলদারেরা তুলেছেন পাকা স্থাপনাসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এতে একসময়ের খরস্রোতা নদীটিতে সৌন্দর্য হারানোর পাশাপাশি কমেছে নাব্যতা। ফলে তিন বছর ধরে ঢাকা-পয়সারহাট লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এদিকে উচ্চ আদালতের আদেশ অনুযায়ী ১ মার্চের মধ্যে নদী দখলদারদের তালিকা নদী কমিশনে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও সন্ধ্যা নদী দখলকারীদের তালিকাই করতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন। নদী দখলমুক্ত করে স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যা নদীর পয়সারহাট এলাকায় শত বছর আগে গড়ে ওঠে বরিশালের বৃহৎ ব্যবসায়িক বন্দর। নদীর তীর ঘেঁষে দুই পাড়ে সহস্রাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে পয়সারহাট-ঢাকা নৌপথে চারটি বড় লঞ্চ চলাচল করত। নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় তিন বছর ধরে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন পয়সারহাট বন্দরের ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একসময় সন্ধ্যা নদী খুবই খরস্রোতা ছিল। নদীটি প্রায় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ ফুট প্রশস্ত ছিল। বর্তমানে পয়সারহাট এলাকায় নদীর প্রশস্ততা দাঁড়িয়েছে ২০০ থেকে ২৫০ ফুট।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর পূর্ব পাশের গোড়ায় আনুমানিক ১৩০ শতক নদীর পাড় বালু দিয়ে ভরাট করে দখল করেছেন আগৈলঝাড়া উপজেলা যুবলীগের সদস্য জেবারুল খান (৪৮)। তার দক্ষিণ পাশে নদীর জমি ভরাট করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন বাগধা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাউস বক্তিয়ার (৬৩)। তার দক্ষিণে নদীর পাড় ভরাট করেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থক আবুল সিকদার (৫৫)। সেতুর উত্তর পাশে নদীর পাড়ে বাঁধ দিয়ে বালু দিয়ে ভরাট করেছেন আবুলের ছেলে কাওছার হোসেন সিকদার (৩৫)। পুরোনো খেয়াঘাটের পূর্ব পাশে নদী দখল করে ঘর তুলে হোটেলের ব্যবসা করছেন বি এম সালাউদ্দিন (৩২) নামের এক ব্যক্তি। এ ছাড়া নদীর পশ্চিম পাড়ে পয়সারহাট বন্দরের লঞ্চ টার্মিনালের পেছনে নদীর মধ্যে বহুতল পাকা ভবন নির্মাণ করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার বাদশা হাওলাদার। বাগধা বাজার এলাকায় নদীর মধ্যে পাকা ভবন নির্মাণ করেছেন একাধিক প্রভাবশালী।
নদী দখলের অভিযোগের বিষয়ে বাগধা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাউস বক্তিয়ার বলেন, ‘আমি নদীর জায়গা দখল করিনি। আমার জমি ভেঙে নদীতে বিলীন হওয়ায় তা ভরাট করেছি।’ আবুল হোসেন সিকদার, তাঁর ছেলে কাওছার হোসেন সিকদার, পয়সারহাট গ্রামের বাদশা বক্তিয়ার, জব্বার তালুকদার, মোনাসেফ হোসেন নদী দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা নদীর জমি দখল করিনি, ক্রয়সূত্রে জমি ভোগদখল করেছি।’ যুবলীগ নেতা জেবারুল খান বলেন, ‘রেকর্ডসূত্রে আমি জমির মালিক। নদীর কিছু জমি ভরাট হয়ে থাকতে পারে। তবে নদী ভরাট করে দখল করিনি। যাদের কাছে জমি লিজ (ইজারা) দিয়েছি, তারা নদী ভরাট করে থাকতে পারে।’ আবুল বাশারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নদীর জায়গা নয়, নিজস্ব জমিতে ভবন নির্মাণ করেছি। সরকার পরিমাপ করে নদীর জায়গা প্রমাণ করলে যেকোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেব।’ বি এম সালাউদ্দিন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে দোকানঘর নির্মাণ করে ব্যবসা করছি। এতে নদীর কোনো ক্ষতি হয়নি।’
বাকাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিপুল দাস বলেন, ‘দখলদারেরা কেউ কেউ জমি নিজেদের নামে রেকর্ড করার চেষ্টা করেন। আমি উপজেলা সেটেলম্যান কর্মকর্তাকে রেকর্ড না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপুল চন্দ্র দাস বলেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশনা হাতে পেয়েছি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সমন্বয়ে সন্ধ্যা নদী পরিমাপ করে দখলদারদের তালিকা প্রণয়ন করা হবে এবং পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ করে নদী দখলমুক্ত করা হবে।’