মাত্র ১১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও। তাতে দেখা যাচ্ছে মোটরসাইকেলের আরোহী দুই যুবক উত্ত্যক্ত করে যাচ্ছিলেন রিকশারোহী তরুণীকে। সেই তরুণীর প্রতিবাদী কণ্ঠও শোনা যাচ্ছে, ‘সাহস থাকলে দাঁড়াও।’ পরে তরুণীর ভিডিও করার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ওই দুই বখাটে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে চলে যান।
তরুণীটির করা সেই ভিডিওটিই ধরিয়ে দিল তানভীর আহমেদ সিদ্দিক নামের এক উত্ত্যক্তকারীকে। আজ শনিবার দুপুরে কোতোয়ালি থানায় সংবাদ সম্মেলনে আসামিকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানান কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহসীন। ওসির পাশে বসে সেদিনের ঘটনা তুলে ধরেন ওই তরুণী। উত্ত্যক্ত করার ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে নারী নির্যাতন আইনে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন। পরে গ্রেপ্তার যুবককেও হাজির করা হয় সাংবাদিকদের সামনে।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, একটি সরকারি কলেজে ডিগ্রি শ্রেণিতে পড়ুয়া এই তরুণী পড়ালেখার পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত। ৬ মার্চ বেলা আড়াইটার দিকে পুরোনো রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ‘অপরাজেয় বাংলা স্কুলের’ অনুষ্ঠান শেষে রিকশা করে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। তাঁর রিকশাটি বাংলাদেশ রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কলোনির প্রবেশমুখ এলাকায় পৌঁছালে মোটরসাইকেলের আরোহী দুই যুবক তাঁর ওড়না টান দিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে একটু দূরে গিয়ে থামেন। রিকশাটি মোটরসাইকেলের কাছাকাছি গেলে পুনরায় ওই যুবকেরা তাঁকে লক্ষ্য করে নানা অঙ্গভঙ্গি ও কটূক্তি করেন। এভাবে ওই তরুণীকে অনুসরণ করে সড়কের তিন জায়গায় তাঁকে আগের মতো নানা কটূক্তি করতে থাকেন। একপর্যায়ে ওই তরুণী ব্যাগ থেকে মুঠোফোন বের করে কৌশলে ভিডিও করতে থাকেন।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মহসীন বলেন, ‘আমার ফেসবুকের মেসেঞ্জারে ওই সাহসী তরুণীটি সেদিনের ভিডিওটা দেন। এরপর আমি সেটি আমার ফেসবুকে শেয়ার করে বখাটেদের গ্রেপ্তারে জনসাধারণের সহযোগিতা চাই। এরপর ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়। গতকাল শুক্রবার এক ব্যক্তি আসামিদের বিষয়ে আমাদের তথ্য দেন। সেই তথ্য অনুসারে শনিবার ভোরে বাকলিয়া থানার মিয়া খান নগর এলাকার বাইদ্দারটেক এলাকায় অভিযান চালিয়ে বখাটেদের একজন তানভীর আহমেদ সিদ্দিককে গ্রেপ্তার করা হয়। জব্দ করা হয় উত্ত্যক্ত করার সময় ব্যবহার করা মোটরসাইকেলটিও। মো. সোহেল নামের অন্য বখাটেকে গ্রেপ্তারেও অভিযান চলছে।’
এ রকম ঘটনা হলে চুপ না থেকে দ্রুত পুলিশকে জানানোর আহ্বান জানান ওসি। তিনি বলেন, ‘আমরা এই তরুণীর মতো হাজারো সাহসী তরুণী খুঁজছি, যারা প্রতিবাদ করবে এভাবে। এই তরুণী অবশ্যই অন্যদের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
ওই তরুণী বলেন, ‘আমি সাহস করে ভিডিও করেছি। এরপর পুলিশের সাহায্য চেয়েছি। আমি চাইছিলাম বখাটেরা যাতে ধরা পড়ে।’ উত্ত্যক্তসহ নারীদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া সব অন্যায় চোখ বুজে না সওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বলেন, ‘আমি চাই সব নারী আমার মতো অন্যায়ের প্রতিবাদ করুক।’