বাবুল-মাহমুদা দম্পতির সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রশ্নে তদন্ত থেমে আছে বলে জানাচ্ছে পিবিআই।
সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম (মিতু) হত্যা মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বলছে, হত্যার ঘটনায় বাবুল আক্তারই প্রধান সন্দেহভাজন। তাঁর পরিকল্পনায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। তিনি বর্তমানে ফেনী কারাগারে আছেন।
পিবিআইয়ের প্রধান বনজ কুমার মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তে এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে, তাতে বাবুলই প্রধান সন্দেহভাজন। তিনি আরও বলেন, বাবুল-মাহমুদা দম্পতির সন্তানদের সঙ্গে পিবিআই কথা বলতে চেয়েছিল, এখনো সেটি হয়নি। তাদের সঙ্গে কথা বলা গেলে সবকিছু আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে।
বাবুল–মাহমুদা দম্পতির বড় সন্তান আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী। ছেলের সামনে ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে মাহমুদাকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই সময় মাহমুদা ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাচ্ছিলেন।
পুলিশ সুপার (এসপি) পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে যোগ দিতে ওই সময় ঢাকায় এসেছিলেন বাবুল আক্তার। স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযানে যুক্ত থাকায় তাঁর স্ত্রী খুন হয়ে থাকতে পারেন। অবশ্য তিন সপ্তাহের কম সময়ে মামলার মোড় ঘুরে যায়।
বাবুল-মাহমুদা দম্পতির সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রশ্নে তদন্ত থেমে আছে বলে জানাচ্ছে পিবিআই। পুলিশের বিশেষায়িত এই তদন্ত সংস্থা বলছে, বাবুলের পরিবার আদালতের নির্দেশ অমান্য করছে। অন্যদিকে বাবুলের পরিবারের আইনজীবীর অভিযোগ, পিবিআই আদালতের নির্দেশ মানেনি।
গত ২৬ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রামের পরিদর্শক আবু জাফর মুহাম্মদ ওমর ফারুক চট্টগ্রামে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেটের আদালতে চিঠি দেন। ওই চিঠিতে আদালতের আদেশ অনুযায়ী বাবুল-মাহমুদা দম্পতির সন্তানদের তদন্ত কর্মকর্তার কাছে হাজির করা নিয়ে কী ঘটেছে, তার বিবরণ দেন। ওমর ফারুক বলেন, প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে বাবুল-মাহমুদা দম্পতির ছেলের জবানবন্দি প্রয়োজন। ছোট মেয়েও সাক্ষী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।
ছেলে–মেয়ে দুটি এখন মাগুরায় দাদা আবদুল ওয়াদুদ মিয়া ও চাচা হাবিবুর রহমানের কাছে আছে।
চট্টগ্রামে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেট দুই সপ্তাহের মধ্যে শিশুদের তদন্ত কর্মকর্তার কাছে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে হাবিবুর রহমান মহানগর দায়রা জজ আদালতে আদেশটি পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। আদালত গত ১৬ মার্চ এই আবেদন খারিজ করে দিয়ে শিশু আইন, ২০১৩ মেনে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। এরপর হাবিবুর রহমান হাইকোর্টে আরেকটি আবেদন করেন।
হাইকোর্টে হাবিবুর রহমানের আইনজীবী শিশির মনির প্রথম আলোকে বলেন, এক দিন শুনানি হয়েছে। এখনো পরবর্তী শুনানির তারিখ পড়েনি।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে পিবিআইয়ের একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, মাহমুদা হত্যায় আর্থিক লেনদেনের অকাট্য প্রমাণ আছে। বাবুলকে জড়িয়ে এ পর্যন্ত আটজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বাবুলের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। এই বিবেচনায় শিশুদের সাক্ষ্য ছাড়াই অভিযোগপত্র দেওয়ার বিকল্প চিন্তা আছে।
এখন পর্যন্ত তদন্তে কিছু জিনিস পরিষ্কার হয়নি বলে মনে করেন মাহমুদার বাবা মোশাররফ হোসেন। তাঁর নাতিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। হত্যাকাণ্ডের তিন সপ্তাহের মাথায় বাবুলকে ডিবি কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করা পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে পিবিআইয়ের কথা বলা প্রয়োজন।