কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের পাঁচ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ শনিবার। পাঁচ বছরে আলোচিত এ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছেন পাঁচবার। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও কোনো আসামি শনাক্ত হয়নি। এখন পর্যন্ত তদন্তেই আটকে আছে মামলার কার্যক্রম।
এদিকে দীর্ঘ সময়েও তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ তনুর পরিবার। তাদের অভিযোগ, টাকা ও ক্ষমতা না থাকার কারণে তারা বিচার পাচ্ছে না। পরিবারের ছোট সদস্যকে হারানোর বেদনায় এখনো কাতর তনুর মা–বাবা, দুই ভাইসহ স্বজনেরা।
২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর লাশ কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের অদূরের কালভার্টের ২০ থেকে ৩০ গজ পশ্চিমে ঝোপ থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ২০১৬ সালের ২১ মার্চ বিকেলে তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
২০১৬ সালের ২১ মার্চ সোহাগী জাহান তনু হত্যা মামলার প্রথম তদন্তের দায়িত্ব পান কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সাইফুল ইসলাম। চার দিন পরে ২৫ মার্চ মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মনজুর আলমকে। পরে ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কুমিল্লার পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম তদন্ত করেন। চতুর্থ দফায় ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা বদল করে সিআইডির নোয়াখালী ও ফেনী অঞ্চলের তত্কালীন সহকারী পুলিশ সুপার (বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) জালাল উদ্দিন আহম্মদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
চার বছর পর গত বছরের ২১ অক্টোবর হত্যা মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকার সদর দপ্তরে স্থানান্তর করা হয়। এরপর পিবিআই তিনবার কুমিল্লা সেনানিবাসে এসে মামলার বাদী তনুর বাবা ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম ও তাঁদের ছোট ছেলে আনোয়ার হোসেন ওরফে রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
তনুর মা আনোয়ারা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিআইডির মতো পিবিআইও জিজ্ঞাসাবাদে পুরোনো বিষয়ে ঘুরেফিরে প্রশ্ন করে। কখন তনু ঘর থেকে বের হলো। কোথায় কোথায় পড়াতে যেত। কার বাসায় যেত। এখনো ওরা পাঁচ বছর আগের অবস্থানে আছে।’
মামলার বাদী ইয়ার হোসেন বলেন, ‘গত বছরের নভেম্বরে পিবিআই আমাকে দুবার জিজ্ঞাসাবাদ করে। আমি প্রশ্নের জবাব দিই। এর বাইরে আর কী বলার আছে?’
পিবিআইয়ের প্রধান পুলিশের উপমহাপরিদর্শক ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, সিআইডির কাছ থেকে মামলার পুরো ডকেটটি নিয়ে তাঁরা খতিয়ে দেখছেন। তাঁরা ঘটনাটি অনুসন্ধানের এমন কোনো বিষয় আছে কি না, যা সিআইডি অ্যাড্রেস করেনি, তা যাচাই করছেন।
মেয়ে তনুর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী পালনে গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার পশ্চিম বাঙ্গরা ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে যান বাবা ইয়ার হোসেন ও মা আনোয়ারা বেগম। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পরে গ্রামের দুটি মসজিদে তনুর স্মরণে মিলাদ মাহফিল হয়।
ইয়ার হোসেন বলেন, ‘গরিব মানুষের টাকা নাই, পয়সা নাই। এই মামলার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। পাঁচ বছর অই গেল, কই বিচার তো পাইলাম না।’
তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আর কত জবানবন্দি দিতাম আমরা। বিচার নিয়া কী কইতাম? উপরওয়ালা বিচার করবে।’