ঢাকায় যাওয়ার পর ওসি মোয়াজ্জেমের মোবাইল বন্ধ: ডিআইজি

নুসরাত জাহান।
নুসরাত জাহান।
>

ফেনীর সোনাগাজীতে আগুনে পুড়িয়ে নুসরাত জাহানকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২৭ মে সাইবার ট্রাইব্যুনাল সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে সেই পরোয়ানা নিয়ে বার্তাবাহক রংপুরের রেঞ্জ ডিআইজির দপ্তরে রওনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন ফেনীর বর্তমান পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান। এই প্রেক্ষাপটে রংপুরের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্যের সঙ্গে আজ বুধবার সকালে মোবাইল ফোনে কথা বলেন মিজানুর রহমান খান।

প্রথম আলো: সোনাগাজীর ওসি মোয়াজ্জেমের বর্তমান স্ট্যাটাস কী? তিনি কি আপনার অধীনে সংযুক্ত হয়েছেন? 
ডিআইজি: হ্যাঁ। অবশ্যই। অনেক আগেই সংযুক্ত হয়েছেন।

প্রথম আলো: কত তারিখে? 
ডিআইজি: তা (নথি) না দেখে বলতে পারব না। ১৫ থেকে ২০ দিন আগে হবে।

প্রথম আলো: তার মানে তিনি কি আপনার দপ্তরে নিয়মিত অফিস করছেন? 
ডিআইজি: না, অফিস করার বিষয় নেই। তিনি হাজিরা দিচ্ছেন। তিনি এই মুহূর্তে নেই। ঢাকায় গেছেন। সম্ভবত ২৯ মে ঢাকায় গেছেন। এরপর আর ফিরে আসেনি।

প্রথম আলো: ঢাকায় গিয়েছেন মানে কী? অফিসের কাজে, নাকি ছুটিতে? 
ডিআইজি: না। অফিশিয়াল কাজে গেছেন।

প্রথম আলো: আপনি তাঁকে অফিসের কাছে পাঠিয়েছেন? 
ডিআইজি: আমি পাঠাইনি। তাঁর একটি মামলার সাক্ষ্যদান ছিল। তাই গেছেন।

প্রথম আলো: ঠিক কোন তারিখে গেলেন? 
ডিআইজি: এই যে বললাম, ২৯ তারিখে। রংপুর থেকে গেছেন ২৭ বা ২৮ তারিখে। তারপর আর আসেননি।

প্রথম আলো: তার মানে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন গত ২৭ মে তাঁর বিরুদ্ধে নুসরাত হত্যায় অভিযোগপত্র দিল। ওই তারিখেই সাইবার ট্রাইব্যুনাল ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করল। তার মানে আপনি পরোয়ানা জারির পরেও তাঁকে...
ডিআইজি: পরোয়ানা জারির বিষয়টি আমি বলতে পারব না। সেটা তো আমার কাছে নেই।

প্রথম আলো: কিন্তু মঙ্গলবার রাতে ফেনীর এসপি মনিরুজ্জামান সাহেব আমাদের বলেছেন, তিনি মঙ্গলবার রাতেই বিশেষ বার্তাবাহককে দিয়ে আপনার কাছে পরোয়ানা পাঠিয়ে দেবেন। 
ডিআইজি: গত রাতে? না, আমি পরোয়ানা পাইনি। এ রকম কোনো পরোয়ানা এলে আমার জানা কথা।

রংপুরের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্যে


প্রথম আলো: কিন্তু আপনি বলছেন, তিনি ঢাকায় গেছেন। কিন্তু তার তো একটা সময়সীমা আছে। কিন্তু আপনি বলছেন যে আপনি জানেন না। 
ডিআইজি: জানি না, মানে তিনি ফেরত আসেননি।

প্রথম আলো: কিন্তু অনির্দিষ্টকাল ধরে তিনি তো সাক্ষাৎ দেবেন না। ২৭/২৮ তারিখে তিনি গেলে আজ নয় দিন। এতগুলো দিন পরও আপনি জানেন না তিনি কোথায়? তাহলে তিনি কি আইনের চোখে ফিউজিটিভ (পলাতক) হয়েছেন?
ডিআইজি: না, ফিউজিটিভ ওইভাবে বলা যাবে না। তিনি অনুপস্থিত রয়েছেন।

প্রথম আলো: তার অর্থ তিনি অননুমোদিতভাবে অনুপস্থিত রয়েছেন?
ডিআইজি: সঠিক। সঠিক।

প্রথম আলো: এমন একজন ব্যক্তি, যাঁর বিরুদ্ধে পরোয়ানা রয়েছে, তাঁকে আপনি অনুপস্থিত বলবেন কেন?
ডিআইজি: আমি তো পরোয়ানা কথাটি বলব না। যেহেতু আমি সেটা পাইনি।

প্রথম আলো: আপনি কাগজটি পাননি। কিন্তু দেশের মানুষ সবাই জানেন, তাঁর বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি হয়েছে।
ডিআইজি: হুঁ হুঁ।

প্রথম আলো: তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, সেটা তো আপনি জানেন নাকি? 

ডিআইজি: (একটু নীরব থেকে) আপনার প্রশ্নটা কী?

প্রথম আলো: সেটা হলো একজন কর্মকর্তা, যিনি আপনার অধীন কর্মরত এবং তাঁর মাথার ওপরে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ঝুলছে... 
ডিআইজি: আমার কাছে যতক্ষণ পরোয়ানা না আসবে, ততক্ষণ এই বিষয়ে আমি কোনো কমেন্ট করতে পারব না। ওই বিষয় তাঁর সংশ্লিষ্টতার বিষয়। আমি শুধু এটুকুই বলব, তিনি ঢাকায় গিয়েছিলেন। তারপর থেকে অননুমোদিতভাবে কর্মস্থল অনুপস্থিত রয়েছেন।

প্রথম আলো: আপনারা এরপর আর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেননি, না? 
ডিআইজি: আমরা চেষ্টা করেছি। কিন্তু ওঁর (মোয়াজ্জেম) মোবাইল তো বন্ধ। সে কারণে তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

প্রথম আলো: আমরা বিকেলের দিকে একটু ফোন দেব, এটা জানতে যে পরোয়ানা পেলেন কি না। 
ডিআইজি: না। এই বিষয়ে আমার কিছুই বলার থাকবে না। আর পরোয়ানা যদি এসেও থাকে, তিনি তো কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। আর এই ধরনের পরোয়ানা তো আমি পাইনি। পরোয়ানা পেলেও আমার তো কিছুই করার থাকবে না।

প্রথম আলো: আপনি তাহলে আইন অনুযায়ী কী করবেন? আপনি কি তাঁকে ফেরার ঘোষণা কিংবা বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবেন? 
ডিআইজি: আমি কোর্টে জানিয়ে দেব যে সে এই অবস্থায় আছে। আমাকে তো কোর্ট পাঠাননি। এখন আপনি বলছেন যে এসপি পাঠিয়েছে। আমি এসপির কাছ থেকে পাইনি। পেলে সেভাবে এসপিকে জানিয়ে দেব।

প্রথম আলো: আপনি শুধু কোর্টকে বলবেন, তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত। 
ডিআইজি: না। কোর্টকে নয়, কোর্ট তো আমার কাছে পাঠাননি। যে পাঠাবে তাকে জানাব।

প্রথম আলো: তাহলে বিকেলে একটা ফোন দেব? 
ডিআইজি: না, প্লিজ, আমাকে ফোন দেবেন না। ফোন পেতে পেতে আমি বিপর্যস্ত। আমার মনে হয়, এই বিষয়টি নিয়ে পুরো ডিপার্টমেন্ট একটি ইয়ের মধ্যে পড়েছে। এ নিয়ে কথা বলতে বলতে একটা বিরক্ত লাগে আরকি।

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ। 
ডিআইজি: ধন্যবাদ।