>• এনআইডি কার্ডে যৌনপল্লীর ঠিকানা থাকায় বিড়ম্বনায় বাসিন্দারা
• ব্যাংক হিসাব খোলাতে সমস্যা
• স্কুলে ভর্তি করাতে পারছেন না সন্তানকে
• বিকল্প কর্মসংস্থানেও ঠিকানা বাধা
জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) ঠিকানা ‘দৌলতদিয়া পতিতালয়’। এই ঠিকানাতেই যত বিড়ম্বনা যৌনপল্লীর বাসিন্দাদের। ব্যাংক হিসাব খোলাসহ বিভিন্ন সেবা পেতে, সন্তানদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে ভোগান্তিতে পড়ছেন। এমনকি বিকল্প কর্মসংস্থানের চেষ্টা করলেও ঠিকানা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বাধা । এ জন্য যৌনকর্মীরা জাতীয় পরিচয়পত্রে ঠিকানা পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন।
যৌনকর্মীদের বেশির ভাগেরই জাতীয় পরিচয়পত্রে গ্রামের নাম হিসেবে এনআইডি কার্ডে ‘দৌলতদিয়া পতিতালয়’ উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সরকারিভাবে এই নামে কোনো গ্রাম নেই।
দেশের ১১টি যৌনপল্লির মধ্যে দৌলতদিয়া অন্যতম। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের দৌলতদিয়া ঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার রয়েছেন ৩ হাজার ৪৬ জন। এর মধ্যে ২ হাজার ১৩৭ জন নারী ভোটার। যৌনপল্লির তালিকাভুক্ত ভোটার ১ হাজার ১৬৫ জন। এর মধ্যে ১ হাজার ১৩৫ জনই যৌনকর্মী। পল্লির বাইরে অনেক যৌনকর্মী আশপাশের ঠিকানা দিয়ে ভোটার হয়েছেন। সেই হিসাবে, যৌনপল্লিতে প্রায় দেড় হাজার ভোটার রয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যৌনকর্মী বলেন, তাঁর বাড়ি ফরিদপুর সদর উপজেলায়। দুর্ঘটনাক্রমে দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে তাঁর ঠাঁই হয়েছে। বাড়িতে তাঁর প্রতিবন্ধী শিশুসন্তান রয়েছে। সে প্রতিবন্ধী ভাতা পেয়েছে। অভিভাবক হিসেবে তাঁর নামে চেক হয়েছে। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র দেখার পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ হিসাব খুলতে রাজি হয়নি।
আরেক যৌনকর্মী বলেন, ‘আমাদের সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করাতে গেলে পরিচয়পত্রের প্রয়োজন হয়। চিকিৎসা নিতে গেলে বা কেউ মারা যাওয়ার পর মৃত্যুসনদ নিতে গেলেও পরিচয়পত্র প্রয়োজন। কিন্তু পরিচয়পত্রে পতিতালয় লেখা থাকায় অনেকে আমাদের দিকে বাঁকা দৃষ্টিতে তাকান। ছোট করে দেখা হয় আমাদের। আমরাও তো মানুষ। তাহলে কেন এত সমস্যা?’
আরও কয়েকজন যৌনকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা জন্মসূত্রে এখানকার বাসিন্দা নন। দুর্ভাগ্যক্রমে তাঁরা এখানে এসে পড়েছেন। বাড়িতে তাঁরা পরিচয় গোপন রাখেন। কিন্তু বাবা বা স্বামীর সম্পত্তি লাভ, জমি বেচাকেনা, সন্তানকে ভালো স্কুলে ভর্তি করা, বিকল্প পেশায় চলে যাওয়া প্রভৃতি ক্ষেত্রে তাঁদের গ্রামের এই পতিতালয় নাম সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যৌনপল্লির সাবেক এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমি এই পরিচয়পত্র নিয়ে ঢাকা শহরের অনেক পোশাক কারখানায় কাজের জন্য ঘুরেছি। কিন্তু পরিচয়পত্রে পতিতালয় লেখা থাকায় কেউ কাজ দেয়নি। পরে পরিচয়পত্র নকল করে কাজ নিয়েছি।’
যৌনকর্মী ও তাঁদের সন্তানদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘মুক্তি মহিলা সমিতি’র নির্বাহী পরিচালক মর্জিনা বেগম বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্রে এমন ঠিকানা দিয়ে তাঁদের ছোট করা হয়েছে। কেউ এই পেশায় ইচ্ছা করে আসেননি। সমাজের কাছে এভাবে কাউকে ছোট করার অধিকার কারও নেই। তাঁরাও সমাজের আর দশজনের মতো মানুষ। ঠিকানার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখার জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবায়েত হায়াত প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে। যেহেতু ঠিকানা পরিবর্তন বা সংশোধনের কাজটি করে নির্বাচন কমিশন, তাই অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। দ্রুত নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে গ্রামের নাম ‘পতিতালয়’ সংশোধন করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।