কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমান (৩৮) নিহত হয়েছেন। তিনি টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়ার মোহাম্মদ ইসলামের ছেলে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে টেকনাফ–কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে বাহারছড়ার নোয়াখালিয়াপাড়ায় মৎস্যঘাট এলাকায় এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
পুলিশের দাবি, ঘটনাস্থল থেকে ২০ হাজার পিস ইয়াবা বড়ি, একটি বিদেশি পিস্তল, একটি এলজিগান ও ২৩টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের এক উপপরিদর্শকসহ (এসআই) তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, নিহত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ইয়াবাবিষয়ক ১২টি, অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগে দুটি, পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে দুটি, মারামারির অভিযোগে ৫টিসহ ২১টি মামলা রয়েছে। তাঁকে গত শুক্রবার গোপালগঞ্জ থেকে আটক করে পুলিশ। গতকাল নোয়াখালিয়াপাড়া মৎস্যঘাটসংলগ্ন এলাকায় অভিযানে গেলে পুলিশের সঙ্গে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়। গোলাগুলির একপর্যায়ে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা পিছু হটেন। সেখান থেকে জিয়াউর রহমানকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক প্রণয় রুদ্র প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে আনার কিছুক্ষণের মধ্যেই জিয়াউর রহমানের মৃত্যু হয়। তাঁর বুক ও পিঠে তিনটি গুলির চিহ্ন রয়েছে। এ সময় পুলিশের তিনজন সদস্যকেও প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য আজ রোববার সকালে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
জিয়াউর রহমানের মামা নূর কামাল বলেন, জিয়াউর রহমান অনেক দিন ধরে তাবলিগ জামাতে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ছিলেন। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে সেখান থেকে তিনি নিখোঁজ হন। তাঁকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজা হয়। সাদাপোশাকের লোকজন তুলে নিয়েছিলেন বলে জানতে পারেন।
ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, গত চার সপ্তাহে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় মাদকের প্রভাব বিস্তার, র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় ১৬ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এ সময় ৩ লাখ ৩০ হাজার ১৭৫ পিস ইয়াবা বড়ি, একটি বিদেশি পিস্তল ও ৩১টি এলজিগান, ১৪৭টি গুলি উদ্ধার করা হয়।
গত ৪ মে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হয়। এ নিয়ে র্যাব-পুলিশের বন্দুকযুদ্ধ ও এলাকায় মাদকের প্রভাব বিস্তারের ঘটনায় টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর একরামুল হকসহ ২১ জন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজনের বাড়ি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহে। বাকি ১৯ জনের বাড়ি টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।