কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। আজ শনিবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালী গাজীপাড়ার পশ্চিমে পাহাড়ের পাদদেশে এ ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে।
পুলিশের ভাষ্যমতে, নিহত দুজন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী। এ ঘটনায় পুলিশের পাঁচজন সদস্য আহত হয়েছেন। টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ প্রথম আলোকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ।
নিহত দুজন হলেন হোয়াইক্যং ইউনিয়নের নয়াবাজারের দিল মোহাম্মদের ছেলে মোহাম্মদ আমিন ওরফে নুর হাফেজ (৩২) ও হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালীর মোহাম্মদ সাব্বির আহমদের ছেলে মোহাম্মদ সোহেল (২৭)।
শুক্রবার রাত নয়টার দিকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ৮ লাখ ১০ হাজার পিস ইয়াবা, ৬টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ মো. আমিন, মোহাম্মদ সোহেল, সৈয়দ নুর ও সৈয়দ আলম ওরফে কালুকে গ্রেপ্তারের পর থানায় সোপর্দ করে। তাঁদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়।
পুলিশের তথ্যমতে, মোহাম্মদ আমিন ওরফে নুর হাফেজ রোহিঙ্গা শীর্ষ সন্ত্রাসী আব্দুল হাকিম ডাকাতের প্রধান সহযোগী (সেকেন্ড ইন কমান্ড)। ঘটনাস্থল থেকে ৬টি দেশে তৈরি এলজি, ১৮টি কার্তুজ, ১৩ কার্তুজের খোসা ও ৯৫ হাজার ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে।
পুলিশের ভাষ্য, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের তথ্য অনুযায়ী, ইয়াবা বড়ি উদ্ধার ও অপরাপর সহযোগী ইয়াবা ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তারের জন্য শনিবার রাতে হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালী গাজীপাড়ার পশ্চিমে যায় পুলিশ। সেখানে পৌঁছামাত্র আবুল আলমসহ অস্ত্রধারী ইয়াবা ব্যবসায়ীরা সহযোগীদের পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন। এতে পুলিশের ৫ সদস্য গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় পুলিশ আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোড়ে। গোলাগুলির মধ্যে পালানোর সময় আমিন ও সোহেল গুলিবিদ্ধ হন। আহত পুলিশ সদস্য ও দুই আসামিকে চিকিৎসার জন্য টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক টিটু চন্দ্র শীল প্রথম আলোকে বলেন, ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে পুলিশ সাতজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। মোহাম্মদ আমিন ও সোহেলের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁদের দুজনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, গুলিবিদ্ধ দুই আসামিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁদের দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। দুজনের লাশ সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে।
গত বছরের ৪ মে থেকে সারা দেশে ইয়াবাবিরোধী অভিযান শুরু হলে আজ শনিবার পর্যন্ত পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও মাদক ব্যবসায়ীদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় কক্সবাজার জেলায় এ পর্যন্ত ৩ জন নারীসহ ১৯২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুজন নারীসহ ৫১ জন রোহিঙ্গা নাগরিকও রয়েছেন।