ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকায় ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে৷ এ ঘটনায় দুই পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে৷
গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে এই ঘটনা ঘটে৷এই ঘটনায় ছাত্রদলের এক নেত্রী ছাত্রলীগের মারধর ও লাঞ্ছনার শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন৷ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, তাদের এক নেতা ও তাঁর এক বন্ধু ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের হাতে বেদম মারধরের শিকার হয়েছেন। তাঁদের বাঁচাতে গিয়ে একজন ভ্রাম্যমাণ খাবার বিক্রেতার ছেলের হাত ভেঙেছে৷
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, বেশ কিছুদিন ধরে টিএসসি এলাকায় বিকেলে লোকজনের ভিড় হয়৷ করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ যেন অনর্থক ভিড় না করেন, তা নিশ্চিতে প্রতিদিনের মতো বুধবারও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের অনুরোধে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক (সদ্যসাবেক ডাকসু সদস্য তানভীর হাসানের নেতৃত্বে কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থী) ভিড় করা মানুষদের চলে যেতে বলছিলেন৷ এই কাজকে কেন্দ্র করে বুধবার সন্ধ্যায় টিএসসিতে কবি জসীমউদদীন হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা ইমাম হাসানের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহফুজুর রহমান চৌধুরীর কথা-কাটাকাটি হয়৷ একপর্যায়ে টিএসসি এলাকায় থাকা ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের অন্য নেতা-কর্মীরাও ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে দুই পক্ষে মারামারি হয়৷ মারামারি থামাতে সেখানে গিয়ে মারধরের শিকার হয়ে হাত ভেঙেছে টিএসসি এলাকার ভ্রাম্যমাণ খাবার বিক্রেতা এক নারীর ছেলের৷ সেখানে মারধর ও লাঞ্ছনার শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মানসুরা আলম৷
ঘটনার বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা ইমাম হাসান ও সদ্যসাবেক ডাকসু সদস্য তানভীর হাসান বলেন, তাঁরা গতকাল বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়া অন্যদের ক্যাম্পাস থেকে চলে যেতে টিএসসি এলাকায় মাইকিং করছিলেন৷ তখন ছাত্রদলের ১০-১২ জন নেতা টিএসসির ভেতরে অবস্থান করছিলেন৷ ইমাম হাসান টিএসসির বাইরের চায়ের দোকানের সামনে গিয়ে ছাত্রদল নেতা মাহফুজুর রহমান চৌধুরী ও তাঁর এক বান্ধবীকে গাড়ি থেকে টিএসসিতে নামতে দেখেন। ইমাম পরিচয় জানতে চাইলে মাহফুজ নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দেন৷ এরপর ইমাম যখন চলে যাচ্ছিলেন, তখন হঠাৎ মাহফুজ তাঁকে ধাক্কা দেন৷ এতে ইমামের পা ম্যানহোলে আটকে গেলে খাবার বিক্রেতার ছেলে মানিক দৌঁড়ে গিয়ে ইমামকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন৷ কিন্তু ততক্ষণে ছাত্রদলের অন্য নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ইমাম ও মানিককে মারতে শুরু করেন৷ টিএসসিতে অবস্থানরত ইমামের বন্ধু সাহাদ আমিনকেও ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা মারধর করেন৷ একপর্যায়ে উপস্থিত সাংবাদিকসহ কয়েকজন ব্যক্তি তাঁদের উদ্ধার করেন। ভুক্তভোগীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি হন৷ এ ঘটনায় মানিকের হাত ভেঙে গেছে৷
তবে ছাত্রদল নেত্রী মানসুরা আলম ঘটনাটিকে সদ্যসাবেক ডাকসু সদস্য তানভীর হাসানের 'ভণ্ডামি' বলে উল্লেখ করেছেন৷ এই নেত্রীর অভিযোগ, তানভীরের নির্দেশেই ছাত্রদল নেতা মাহফুজুর রহমান চৌধুরীর ওপর হামলা হয়েছে৷ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ওয়ালে এই ঘটনার বিষয়ে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, 'সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে টিএসসিতে মাহফুজকে টেনে গাড়ি থেকে নামাচ্ছিলেন কবি জসীমউদদীন হলের জিএস ইমাম হাসান ও তাঁর সঙ্গে থাকা কয়েকজন ছেলে৷ আমি দৌড়ে যেতে যেতে মাহফুজের ওপর ওরা লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলে পড়ল৷ ছাড়ানোর চেষ্টা করতে গিয়ে নিজেও একদফা মার খেলাম৷ এরই মধ্যে অনেক লোক জড়ো হয়ে গেল, যাদের ৮০ শতাংশ ছাত্রলীগ কর্মী৷ হামলা চলাকালীন তানভীর ও আমাদের ছাত্রদলের কিছু সিনিয়র আসলেন৷ আমাদের সিনিয়রেরা ফেরানোর চেষ্টা করলেও তানভীর তাঁর লোকজনকে নির্দেশ দিলেন যে ওই ধর এইটারে৷ শুধু তাই নয়, ইমাম ছেলেটা দুইবার আমার দিকে তেড়ে এল মারতে। উপস্থিত লোকজন তাকে আটকান কোনোমতে৷ এরপর মাহফুজকে নিয়ে আমরা ঢাকা মেডিকেলে যাই। সেখানে ওকে চিকিৎসা দিতে দিতেই সাংবাদিকদের ফোন পাই যে আমরা নাকি তানভীর ও তার লোকজনের ওপর হামলা করেছি।'