কেউ একজন বলেছেন, এই টিউবওয়েলের পানি পান করলে সব রোগ সেরে যায়। সেই কেউ একজন আবার শুনেছেন অন্য আরেকজনের কাছে। সেই অন্যজন আবার শুনেছেন আরেক অন্যজনের কাছে। তবে ঠিক কে প্রথম বলেছেন, আর কার সব রোগ সেরেছে, সেই প্রশ্ন কেউ করছেন না। বরং শত শত মানুষ ছুটছেন নিজের রোগ সারাতে। গড়িয়ে পড়ছেন ওই টিউবওয়েলের পানির নিচে। হুটোপুটি লাগিয়ে দিচ্ছেন, কে কার আগে পানি নিতে পারে।
এই দৃশ্য ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গোপালপুর গ্রামে। কিছুদিন আগে এই গ্রামের পূর্বপাড়ার মাঠের মধ্যে একটি টিউবওয়েল বসানো হয়। তবে হঠাৎ এলাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে, এই টিউবওয়েলের পানি সর্বরোগের ওষুধ। এই গুজবে পড়ে শত শত মানুষ ছুটছে ওই টিউবওয়েলের পানি নিতে।
এলাকার কয়েকজন বলছেন, এটা গুজব। টিউবওয়েলের পানিতে রোগ সারবে, এটা ভ্রান্ত ধারণা। যাঁরা ওই টিউবওয়েলের পানি নিতে এসেছেন, তাঁরা কেউ বলতে পারছেন না, কারও রোগ ভালো হয়েছে কি না।
সোমবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের মধ্যে একটি মেহগনি বাগান। সেখানে কয়েক শত মানুষ অপেক্ষা করছে, যাদের বেশির ভাগই নারী। কিছু বৃদ্ধ আছেন, তবে কিশোর ও যুবকের সংখ্যা কম। বেশির ভাগ মানুষ এসেছে কলস আর বোতল নিয়ে। একদল মানুষ পাইপের মাধ্যমে সবাইকে পানি দিচ্ছে। মাঝেমধ্যে পাত্রে দিচ্ছে, আবার ছড়িয়ে সবাইকে ভিজিয়ে দিচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রায় ২ মাস হলো মধুহাটি ইউনিয়নের পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন মাঠের মধ্যে টিউবওয়েলটি বসিয়েছেন। এরপর কীভাবে এই পানি পান শুরু হলো, তা কেউ বলতে পারে না।
কোটচাঁদপুর উপজেলার জালালপুর গ্রামের জবেদ আলী বলেন, তিনি হাঁপানীর রোগী। শুনেছেন এই পানি পান করলে রোগ ভালো হয়। তাই পানি নিতে এসেছেন। তবে পানি পান করে কাউকে ভালো হতে দেখেছেন কি না? জানতে চাইলে, তিনি দেখেননি বলে জানান।
ডাকবাংলা এলাকার রহিমা বেগম এসেছেন পেটের ব্যথা নিয়ে। পানি পানের পর গোসলও করেছেন। এরপরও তাঁর রোগ ভালো হয়নি।
এ বিষয়ে গোপালপুর গ্রামের একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে বলেন, গুজব ছড়ানোর পেছনে ব্যবসা জড়িত। বর্তমানে এখানে শয়ে শয়ে মানুষ আসছে। এরপর এখানে বাজার বসবে, কিছু মানুষের ব্যবসা হবে। ছোট ছোট যানবাহনের চালকেরা এরই মধ্যে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। কিছুদিন এভাবে চলার পর নানা অজুহাতে টাকা আদায় করা হবে। একটা সময়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। এটা এখনই বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।
স্থানীয় বাজার-গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মঈন উদ্দিন বলেন, এগুলো বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই।
চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন বলেন, তিনি সরকারি বরাদ্দে এই টিউবওয়েলটি স্থাপন করেছেন। স্থাপনের ৪ থেকে ৫ দিন পর তিনি শুনেছেন, পানি খেলে সব ধরনের রোগ ভালো হবে। সেই বিশ্বাস থেকে মানুষ পানি খাচ্ছেন। পরে তিনি ওই টিউবওয়েলের সঙ্গে মোটর লাগিয়ে দেন, যাতে মানুষ দ্রুত পানি নিতে পারে।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মী ইসলাম বলেন, এই ঘটনার খবর তিনি পেয়েছেন। ঘটনাস্থলের গিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন। তিনি বলেন, এই পানি খেলে রোগ ভালো হচ্ছে, এটা কোথা থেকে ছড়াল, কারা কী উদ্দেশ্যে নিয়ে ছড়াল, সেটাও তদন্ত করা হবে।