গাঁজা সেবনের জন্য সহকর্মীর কাছ থেকে ৫০ টাকা ধার নেন দুজন। ধারের টাকা না দেওয়ায় ওই সহকর্মী তাঁদের চড় মারে। এর প্রতিশোধ নিতেই গলায় গামছা পেঁচিয়ে খুন করেন সহকর্মীকে। এতেই ক্ষান্ত হননি, প্রমাণ মুছে দিতে লাশ পুড়িয়েও দেন। গ্রেপ্তার এক আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নৃশংস এই খুনের বর্ণনা উঠে আসে। আসামির নাম জীবন আচার্য।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম শফি উদ্দিনের আদালতে জবানবন্দি দেন আসামি। গত বৃহস্পতিবার হালিশহর থেকে জীবন ও আরেক আসামি দুর্জয় আচার্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
২১ এপ্রিল রাতে নগরের হালিশহরে ফইল্যাতলি খালপাড় এলাকার একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে ১৬ থেকে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আগুনে তার শরীরের ৯০ ভাগ অংশ পুড়ে যায়। এই ঘটনায় হালিশহর থানায় মামলা করে পুলিশ। পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে লাশটি আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামকে হস্তান্তর করা হয়।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (ডবলমুরিং অঞ্চল) আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের পর আগুনে পোড়া কিশোরের পরিচয় পাওয়া যায়। তার নাম দিলীপ আচার্য। বাড়ি খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়িতে। মা-বাবা কেউ নেই। কিশোরটি সীতাকুণ্ডে একটি কারখানায় কাজ করত। তার সঙ্গে দুই আসামিও সেখানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। দুই মাস আগে গাঁজা খেতে কিশোর দিলীপের কাছ থেকে ৫০ টাকা ধার নেন তার সহকর্মী জীবন ও দুর্জয়। ওই টাকা চাওয়ায় দিলীপকে তাঁরা গালাগাল করেন। একপর্যায়ে দিলীপ তাঁদের চড় মারে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জীবন ও দুর্জয় খুনের পরিকল্পনা করেন। তাঁদের বাড়ি নগরের হালিশহরে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১৮ এপ্রিল দিলীপকে বেড়ানোর কথা বলে সীতাকুণ্ড থেকে হালিশহর নিয়ে আসেন। এরপর নাথপাড়ায় একটি জঙ্গলের ভেতর নিয়ে গলায় গামছা পেঁচিয়ে খুন করেন। পরে লাশটি বস্তাবন্দী করে পার্শ্ববর্তী একটি খালে ফেলার জন্য রাখেন। কিন্তু নিজেরা ধরা পড়ার আশঙ্কায় লাশটি খালে ফেলেননি।
পুলিশ কর্মকর্তা আশিকুর রহমান আরও বলেন, ঘটনার দিন রাতেই বস্তাবন্দী লাশটি একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে যান তাঁরা। সীমানা দেয়ালের ওপর দিয়ে এটি ভেতরে ফেলা হয়। পরে আগুন দিয়ে লাশটি পুড়ে তাঁরা চলে যান। তিন দিন পর দুর্গন্ধ বের হলে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেন।
হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুল হক বলেন, জবানবন্দি দেওয়ার পর দুই আসামিকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।