মানসিক প্রতিবন্ধী যুবকটি প্রায় চার বছর আগে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন। বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে সন্ধান না পাওয়ায় তাঁর আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলেন স্বজনেরা। অবশেষে ‘ছেলেধরা’ সন্দেহে আটক হওয়ার পর সন্ধান মিলল সেই যুবকের। পুলিশের সহযোগিতায় তিনি স্বজনদের সঙ্গে বাড়ি ফিরে গেছেন।
ওই যুবকের নাম তাইজ উদ্দিন (২৬)। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার টেপিরবাড়ী এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেনের ছেলে। গত শনিবার সন্ধ্যায় ছেলেধরা সন্দেহে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পূর্ব গোয়ালবাড়ী গ্রামের লোকজন তাঁকে আটক করে পুলিশে দিয়েছিলেন। গতকাল রোববার তাঁকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
জুড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, থানায় নিয়ে আসার পর ওই যুবক এলোমেলো কথাবার্তা বলছিলেন। তিনি ক্ষুধার্ত ছিলেন। তাঁকে রাতের খাবার খাওয়ানোর পর রাতে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে শুধু নাম-ঠিকানা বলেন। আমিনুল ইসলামের বাড়িও শ্রীপুর হওয়ায় তিনি সেখানকার পরিচিত এক জনপ্রতিনিধির সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি তাইজ উদ্দিনের এক চাচার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইমোতে ভিডিও কলের মাধ্যমে স্বজনেরা তাইজকে শনাক্ত করেন। রাতেই স্বজনেরা শ্রীপুর থেকে জুড়ীর উদ্দেশে রওনা দেন। গতকাল ভোরে তাঁরা সেখানে পৌঁছান। সকাল ১০টার দিকে স্বজনেরা তাইজকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন।
গতকাল সকাল সাড়ে নয়টার দিকে জুড়ী থানায় গিয়ে দেখা যায়, স্বজনেরা তাইজকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করছেন। তাইজ ফ্যালফ্যাল করে তাঁদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন।
তাইজের চাচা মোসলেম উদ্দিন জানান, সাত-আট বছর আগে তাইজ হঠাৎ মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২০১৫ সালের দিকে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমায় গিয়ে নিখোঁজ হন। এরপর থেকে তাঁর আর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। মোসলেম আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আমরা তো তাঁকে (তাইজ) ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। আল্লাহর কাছে লাখো শোকরিয়া।’ মোসলেম বলেন, দেশে ছেলেধরা সন্দেহে লোকজন যেভাবে আক্রান্ত হচ্ছে, তাইজের ক্ষেত্রেও এ পরিণতি ঘটতে পারত। পুলিশ তাঁকে রক্ষা করেছে। নিখোঁজ তাইজকে ফিরিয়ে দেওয়ায় তিনি পরিদর্শক আমিনুল ইসলামের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ছেলেধরা গুজব নিয়ে কয়েক দিন ধরে প্রচারণা চালানোয় মানুষ এখন বেশ সচেতন। তাইজকে কেউ মারধর করেনি। শুধু আটকে রেখেছিল। স্বজনদের কাছে তাঁকে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমি খুশি। এ বিষয়ে থানায় জিডি (সাধারণ ডায়েরি) হয়েছে।’