উত্তরাঞ্চলের বিদুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নেসকো লিমিটেডের নীলফামারীর ডোমার কার্যালয়ের ১২ জন পিচরেট কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করায় তাঁরা পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। ওই কার্যালয়ের কিছু কর্মকর্তা তাঁদের অনিয়ম ও দুর্নীতি কর্মচারীদের ঘাড়ে চাপিয়ে তাঁদের চাকরি থেকে বাদ দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে ।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে নীলফামারী জেলা শহরের মিডিয়া হাউসে এসে এই অভিযোগ করেন চাকরিচ্যুত পিচরেট (মিটার রিডার ও বিল বিতরণকারী) কর্মচারী জাকির হোসেন, সুজন ইসলাম, মিলন ইসলাম, সাঈদ হাসানসহ কয়েকজন।
মো. জাকির হোসেন অভিযোগ করেন, ‘নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) লিমিটেড পিডিবির কাছ থেকে দায়িত্ব নেওয়ার পর ডোমার কার্যালয়ের কর্তাব্যক্তিরা সরকারি বরাদ্দের মেরামতের জন্য বৈদ্যুতিক নানা সরঞ্জাম বাইরে বিক্রি করে দেন। মিল–কারখানার মালিকদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বিদ্যুতের ইউনিট চুরি করাসহ লাগামহীন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ে সিস্টেম লস (অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার)। আর এই সিস্টেম লসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পদস্থ্ কর্মকর্তারা মৌখিক ও পড়ে অফিস আদেশ জারি করে সাধারণ গ্রাহকদের মাথায় ভৌতিক বিল চাপান। ভৌতিক বিলের কারণে অতিষ্ঠ গ্রাহকেরা দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করেন। দুদক ১৩৪টি অভিযোগ আমলে নিয়ে গত বছরের ২৩ অক্টোবর ডোমারে গণশুনানির আয়োজন করে। এই সময় কর্মকর্তারা এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান। পরে কর্মকর্তারা অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি করে নিজেরাই প্রহসনমূলক তদন্ত করেন। তদন্তে গ্রাহক হয়রানি, অতিরিক্ত বিল দাবি ও ভৌতিক বিল করার অভিযোগে আমাদের ১১জন পিচরেট কর্মচারীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেন।’
মো. সাঈদ হাসান অভিযোগ করে বলেন, ‘ডোমার কার্যালয়ের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম মন্ডল নানা অনিয়ম করেছেন। তিনি মিল–কারখানার মালিকদের অনৈতিক বৈদ্যুতিক সুবিধা দিয়ে এবং নতুন গ্রাহকদের বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার পরও তাঁদের নামে বিল চালু করেননি। এই কারণে সিস্টেম লসের মাত্রা ৫০ শতাংশে গিয়ে ঠেকে। এই পরিস্থিতিতে চাকরি বাঁচাতে গ্রাহকের ওপর ভৌতিক বিল চাপানোর জন্য আমাদের তাগিদ দেন তিনি। ২০১৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দাপ্তরিক আদেশ জারি করে সাধারণ গ্রাহকদের ব্যবহৃত লোডের ওপর এক শ ইউনিট করে বেশি বিল করার জন্য আমাদের বাধ্য করা হয়। আর ওই আদেশ পালন করতে গিয়ে এখন আমরা চাকরিচ্যুত। অথচ দুদকে করা গ্রাহকদের ১৩৪টি আবেদনের কোনোটিতে আমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না।’
মিল–কারখানার মালিকদের অনৈতিক সুবিধা দেওয়া, গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত বিল আদায় এবং সব অনিয়মের দায় পিচরেট কর্মচারীদের ওপর চাপানোর অভিযোগ অস্বীকার করে নেসকো ডোমার কার্যালয়ের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম মন্ডল বলেন, ‘আমি বদলিজনিত কারণে রাজশাহীতে আছি। অফিস আদেশ জারি সম্পর্কে আমার এখন মনে নেই। কাগজ না দেখে কিছু বলতে পারব না।’
চাকরি হারানো অপর পিচরেট কর্মচারী জাকির হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে চাকরি করার পর গত ১০ ফেব্রুয়ারি আমাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আমাদের ঘরে এখন চাল নেই। বাচ্চাদের স্কুলের খরচ দিতে পারছি না। অনেকের ঘরে অসুস্থ্ রোগী আছেন। টাকার অভাবে তাঁদের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আমাদের রুটি রুজির কোনো ব্যবস্থা নেই।’
এ বিষয়ে নেসকোর ডোমার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউসুফ আলী বলেন, এই ইউনিটে (কার্যালয়ের) শুরু থেকে সমস্যা। দীর্ঘদিন ওভার বিলিং হওয়ার কারণে গ্রাহকেরা ক্ষিপ্ত হয়ে দুদকে অভিযোগ দিয়েছেন। তাঁরা সমস্যাগুলো সমাধানে কাজ করছেন। ১২ জন পিচরেট কর্মচারীকে তিনি এখানে আসার আগেই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।